জেলায় জেলায় পঞ্চায়েতের ত্রাণ বিলি নিয়ে বিক্ষোভ অব‍্যাহত

0

HnExpress ২৫শে জুন, ঝুম্পা দেবনাথ, কলকাতা ঃ বর্তমানে জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত এর ত্রাণ বিলি নিয়ে বিক্ষোভ অব‍্যাহত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, করোনার জন্য রোজগার হারিয়ে এবং আমফান ঝড়ের প্রভাবে মাথার ছাদ হারিয়ে গ্ৰামের অনেক মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। শুধু বাড়ির ছাদ ও রোজগার হারিয়েই তারা অসহায় হয়ে পড়ছেন তা নয়, বহু রাস্তা ভেঙে যাওয়ার জন্য, সেগুলো মেরামতির অভাবে, দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ আকালেই তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন।

ফলে বাংলার মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্ৰামের রাস্তা মেরামতি এবং আমফানের প্রভাবে অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্ৰামের মানুষদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে অর্থ সাহায্য দেওয়ার ব‍্যাবস্থা করেছেন পঞ্চায়েত এর মাধ্যমে। কিন্তু মুখ‍্যমন্ত্রীর দেওয়া সেই টাকা নিপীড়িত মানুষের কাছে পৌঁছে না দিয়ে, রাস্তা মেরামত না করে বিভিন্ন জেলার গ্ৰাম পঞ্চায়েতের প্রধান সহ সদস্যমন্ডলীরা সেই টাকায় নিজের প্রিয়জনদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে দিচ্ছেন।

এবং নিজের ইমারতের বাড়ি সাজাচ্ছেন বহু মূল্যবান শৌখিন জিনিস দিয়ে, উঠে এসেছে এমনই কিছু অভিযোগ। আর অন্যদিকে যাদের নির্বাচনে পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে আমলা-মন্ত্রীতে পরিনত হচ্ছেন, অর্থাৎ সেই সমস্ত সাধারণ মানুষ, মাথার ছাদ না পেয়ে, আহার্য্য না পেয়ে, ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে নিজেদের জীবনকে খাদের ধারে নিয়ে এসে দাঁড় করাচ্ছেন। নদিয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ বিভিন্ন জেলার বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে এই একই চিত্র উঠে আসছে স্থানীয় গ্ৰামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে।

ফলতঃ ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রায়দিঘি থানার অন্তর্গত মথুরাপুর ২ নম্বর ব্লকের নন্দকুমার গ্ৰাম পঞ্চায়েতের সদস্য স্বপনকুমার ঘাটুকে দুর্ণীতি করার অভিযোগের ভিত্তিতে কান ধরে উঠবোস করলেন স্থানীয় গ্ৰামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, নন্দকুমার বাসিন্দা তথা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য স্বপনকুমার ঘাটু অসহায় মানুষদের অ্যাকাউন্টে টাকা না দিয়ে, নিজের প্রিয়জনদের অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা দিচ্ছেন। আবার কোথাও হয় তো চলছে ভাঙচুর বা রাস্তা আটকে অবরোধ, উঠে আসছে এমনই সব চিত্র।

১০০ দিনের কাজের নিরিখে নদীবাঁধের কাজ বন্ধ থাকার দরুন, নদীর বাঁধ ভেঙে গিয়ে জল গ্ৰামের ভেতরে ঢুকছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও আমফানের প্রভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা নষ্ট করলে উপযুক্ত ব‍্যাবস্থা নেবেন বলেই জানিয়েছিলেন মুখ‍্যমন্ত্রী। এই কথার ভিত্তিতেই পরে ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। আবার কোনো কোনো জায়গায় বেহাল রাস্তার মেরামতের প্রতিশ্রুতি দিয়েও মেরামত না করার অভিযোগ তুলছেন ক্ষিপ্ত গ্ৰামবাসীরা।

বরং রাস্তা মেরামতে বরাদ্দ হওয়া টাকা নিজের প্রয়োজনে লাগাচ্ছেন বলে অভিযোগ জানাছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে!স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনার জন্য বিক্ষোভও দেখাচ্ছেন। তারা জানান যে, করোনা ভাইরাস ও আমফানের প্রভাবে যেখানে সাধারণ মানুষেরা জীবন নির্বাহ করতে নাভিশ্বাস উঠছে, সেখানে পঞ্চায়েতের সদস্য থেকে আমলা-মন্ত্রীরা পর্যন্ত নিজেদেরকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে তুলছেন। তাহলে এই করোনা ও আমফানই কি তৃণমূল নেতাদের টাকায় ফুলেফেঁপে উঠতে সাহায্য করল?..

এমনটাই প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামের ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। অন্যদিকে, পঞ্চায়েতের এই দুর্ণীতির কথা তুলে ধরছেন তৃণমূল দলের সদস্য তথা কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মিত্র। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও করে পঞ্চায়েতের কর্মীদের কাজের অস্বচ্ছতা তুলে ধরেন। তিনি জানান, একজন সাংসদ বছরে ৫ কোটি টাকা পায় এবং পঞ্চায়েত পায় প্রায় ২ কোটি টাকা। সেই টাকা পঞ্চায়েত সঠিক ভাবে ব‍্যবহার করলে গ্ৰামে কোনো কাচা রাস্তা থাকার কথা নয়।

কিন্তু পঞ্চায়েত কর্মীরা বড় কাজ না করে ছোট ছোট কাজ করে। কারণ সাড়ে ৩ লক্ষের বেশি খরচ করলেই ISGP ও ব্লক সেই কাজের রিভিউ করে, তাই পঞ্চায়েত এর বড় রাস্তা তৈরির পরিবর্তে ছোট কাজের দিকেই ঝোঁক। কিন্তু তিনি তাঁর অধীনস্থ পঞ্চায়েতকে বড় রাস্তা তৈরি কথা বলেও কাজ করেনি পঞ্চায়েত, এমনটাই জানিয়েছেন সাংসদ মহুয়া মিত্র। তাঁর এই কথার নিরিখে দলের অভ‍্যন্তরে দলের কর্মীদের মধ্যে মত পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলত উঠে আসছে এক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চিত্র।

এই সমস্ত দুর্ণীতিজনক ঘটনার ভিত্তিতে বিরোধী মহলে সমালোচনার সুর উঠেছে সপ্তমে। এদিকে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার জানান, এই কথা স্পষ্ট যে, গত ছয় বছরে পশ্চিমবঙ্গে কোন উন্নয়ন হয়নি এবং এই রাজ‍্যসরকার কেন্দ্রের সাথে বিবাদ করে পশ্চিমবঙ্গকে আরও পিছনে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেই জানান। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যের নিরিখে আয়ূসমান ভারত এবং কৃষকদের জন্য কৃষক সম্মানীধি যোজনা… কেন্দ্র থেকে আগত এইরকম নানা সুবিধা থেকে পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত হচ্ছেন শুধু মাত্র রাজ‍্যসরকার তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স‍রকারের বিবাদী মনোভাবের ফলে।

বামফ্রন্ট নেতা ফুয়াক আকতার বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তেলের দাম ক্রমশ বেড়েছে, মানুষের অসুবিধার এই দিকটা নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল-দুই দলের কেউই কর্ণপাত করছেন না। আমফানের পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ পরিষেবার হিসাব দেখাতে গিয়ে দুই দলই নিশ্চুপ। তিনি আরও জানান, তৃণমূল ও বিজেপি সহ দুই দলই দুর্ণীতি গ্ৰস্ত লোকেদের আশ্রয় দেয়, কিন্তু বামফ্রন্টে দুর্ণীতিগ্ৰস্ত মানুষদের সদস্য পদ দেওয়া হয় না বলেই জানান তিনি।

ফলে বাংলার মানুষকে সোনার বাংলা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও যদি প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারেন, তাহলে মানুষ অন‍্যদলকেই বা ভরসা ক‍রবেন কি করে? নিজেদের পকেট না ভরিয়ে তাহলে মানুষের কথা ভাবছেন কারা? ক্ষিপ্ত মানুষের এই সমস্ত প্রশ্নের উওর দেবে আগামী বিধান সভার নির্বাচন —এমনটাই বলছেন বিরোধী মহলের একাংশ।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply