এবারে করোনা মহামারীর তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় গোটা দেশ—

0

HnExpress অরুণ কুমার, ওয়েবডেক্স নিউজ ঃ এবারে করোনা মহামারীর তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পরার আশঙ্কায় দিন গুনছে ভারত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে এ বিষয়ে সর্তকতা জারি করেছিলেন এইমসের ডিরেক্টর ডা: রণদীপ গুলারিয়া। তিনি জানিয়ে ছিলেন যদি মানুষ এখনো সতর্ক না হয় তাহলে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এবং পরবর্তীতে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ রূপ নেবে এই করোনার তৃতীয় ঢেউ।

অপরদিকে আইআইটি কানপুরের সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সূত্রে জানা গিয়েছে “করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে রোজ আক্রান্ত হবে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ”। তাহলে এই ডেল্টা প্লাস করোনা প্রজাতির জন্যই কি আসন্ন তৃতীয় ঢেউ? এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা তাদের অভিমত দিয়েছেন।
এদিকে আবার দেখা দিয়েছে করোনার নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও। দেশে আবারও ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় ৫৪,০৬৯ জন নতুন করে করোনার আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১৩২২ জন সংক্রামিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও দেশে টানা ৪২ তম দিনে করোনা দৈনিক আক্রান্তের চেয়ে সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি। ৬৮,৮৮৫ জন লোক করোনামুক্ত হয়েছিলেন। গত কয়েকদিনে প্রায় ১৯ লক্ষ করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যার পজিটিভিটি রেট ৩ শতাংশের একটু বেশি। এটা এই কয়েকদিনের চিত্র, তবে বড়সড় বিপদের আশঙ্কায় দিন গুনছে সারা দেশ।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের গতি মন্থর হলেও ভাবনা এবার তৃতীয় ঢেউ। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের আশঙ্কায় এখন করোনা ভাইরাসের ডেল্টা প্লাস প্রজাতি। নতুন ভেরিয়েন্ট এর জন্যই কি আসবে তৃতীয় ঢেউ? সম্ভাবনার কথা জানালেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনুরাগ আগরওয়াল। তিনি বলেছেন যে, ‘ডেল্টা প্লাসের জন্য যে তৃতীয় ঢেউ আসবে এমন প্রমাণ এখনো মেলেনি।’

তিনি এবং তার সহযোগীরা মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে ছিলেন কোভিড আক্রান্তদের নমুনা। তা থেকে চালিয়ে ছিলেন গবেষণা। তিনি আরও বলেছেন, ‘মহারাষ্ট্র থেকে আমরা প্রায় সাড়ে তিন হাজার নমুনা সংগ্রহ করেছি। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাপ্ত স্যাম্পলগুলোর মধ্যে পাওয়া গিয়েছে ডেল্টা প্লাস প্রজাতি। কিন্তু শতকরা হিসেবে তার সংখ্যা খুবই কম। প্রায় ১ শতাংশ।’

এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ডেল্টা প্লাস প্রজাতিকে ‘চিন্তার কারণ’ বলে উল্লেখ করেছে। চিঠি লিখে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে তিন রাজ্যকে। মধ্যপ্রদেশ, কেরল এবং মহারাষ্ট্রকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডাক্তার অনুরাগ বলছেন, ‘আমাদের সমস্ত রকমের ডেল্টার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এখনও এটা ভুললে চলবে না যে দ্বিতীয় ঢেউ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাই তৃতীয় ঢেউ এর ব্যাপারে চিন্তা করার আগে আমাদের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিরুদ্ধে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।

পরিস্থিতি যাই হোক না কেন গা’ছাড়া মনোভাব দেওয়া একেবারেই উচিত না। কিন্তু ডেল্টা প্লাস নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোন কারণ রয়েছে বলে আমি অন্তত মনে করছি না।’
সারা দেশ যখন একদিকে করোনা মোকাবিলায় প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউকে সামলে উঠেছে আর এই অবস্থায় লকডাউন বিপর্যস্ত অর্থনীতি সেই প্রেক্ষাপটে করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ যে খুব বিপজ্জনক হতে পারে এবং এর শিখর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর হতে পারে তা নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কায় দেশ।

এই সময়ে দৈনিক পাঁচ লক্ষ পর্যন্ত করোনা রিপোর্ট আসতে পারে। আইআইটি কানপুর এ বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ১৫ই জুলাইয়ের মধ্যে পুরো দেশটি আনলক হয়ে যাবে। চলতি বছরের জানুয়ারির মতো পরিস্থিতি হতে চলেছে। সে সময় জানুয়ারীতে সবকিছুই আনলক করা হয়েছিল। তাই আমরা যদি সাবধানতা অবলম্বন না করি, সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলি মেনে না চলি এবং মাস্ক না পারি, তবে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের শিখরটি অক্টোবরের মধ্যেই আসতে পারে।

এ বিষয় বিশেষজ্ঞরাও এই সত্যটি মেনে নিচ্ছেন। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতি আরও একবার খারাপ হতে শুরু করবে এবং অক্টোবরের মধ্যে এর বিশালতা যথেষ্ট হবে। দ্বিতীয় জিনিসটি হ’ল করোনা যদি পরিবর্তিত মিউট্যান্টদের সাথে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে ও সাধারণ মানুষেরাও যদি সতর্কতা অবলম্বন না করেন, তবে এর শিখরটি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আসবে। অর্থাৎ আগস্ট থেকেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করবে।

তৃতীয় পর্যায়টি হ’ল মানুষ যদি সাবধানতা না অবলম্বন করে, ভ্যাকসিনের পর মাস্ক না পড়ে, তবে এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় ঢেউয়ের শীর্ষটি নভেম্বরের মধ্যে চলে আসবে। দেশে যখন ডেল্টা প্লাসের চোখ রাঙানি বাড়ছে তখনই বেড়ে চলেছে দৈনিক কোভিড সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩২১ জনের। এই সময়ে দেশে কোভিডমুক্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৮৮৫ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বারবার বলছেন করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে অন্যতম হাতিয়ার টিকা। তাই টিকাকরণে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ জোর। এখনও পর্যন্ত দেশে টিকা পেয়েছেন ৩০ কোটির ওপর মানুষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশে এখনও পর্যন্ত তিন কোটিরও বেশি মানুষ করোনার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ লক্ষ ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত ৩৯ কোটি ৫৯ লক্ষেরও বেশি করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে।

প্রায় ১৯ লক্ষ করোনার স্যাম্পেল পরীক্ষা করা হয়েছিল, যার পজিটিভিটি রেট ৩ শতাংশের বেশি। দেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনা আক্রান্ত এর সংখ্যা ৬ লাখ ২৭ হাজার ৫৭ জন। (এই পরিসংখ্যান পরিবর্তনশীল) বিশেষজ্ঞ এবং ডাক্তারদের মতে, করোনা প্রতিরোধ করতে হলে ভারতবর্ষের মতো জনবহুল দেশে গণসচেতনতা খুবই জরুরী। সামাজিক দূরত্বের পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার এবং হাত পরিষ্কার রাখা এই সমস্ত বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

তা না হলে আগামী দিনে এই করোনা অতিমারি পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই জ্বর-কাশির এভাবেই আবির্ভাব ঘটতে থাকবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
‌সুতরাং মানুষের সচেতন হওয়া খুবই জরুরী। এছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। ভারতবর্ষের মতো জনবহুল দেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো যখন অত্যন্ত দুর্বল সেক্ষেত্রে জনগণকে নিজেকে ঠিক রাখার দায়িত্ব নিতে হবে, এটাই আসল এবং মোদ্দাকথা।

….

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply