পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের নামে এক গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির চেষ্টায় অভিযুক্ত মধ্যমগ্রাম থানার সিভিক ভলেন্টিয়ার ফিরোজের কুকীর্তি ভাইরাল
HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি, মধ্যমগ্রাম ঃ পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের নামে অপদস্ত বা হেনস্তা হওয়া অথবা হাতে ঘুষের টাকাটা চুপচাপ গুঁজে দেওয়াটা চিরকালের নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে। সেটা হয়তো কখনো নথিপত্রের গড়মিলে, আবার কখনোবা জন্ম আর বর্তমান বাসস্থানের ঠিকানায় মিল না থাকায়। আর এইসব ক্ষেত্রে ভরসা বলুন বা অন্তিম উপায় সেটা হলো সেই এলাকার থানার ডিআইবি’র উপর নির্ভর করা। এছাড়া আর কোন উপায় অবশিষ্ট নেই। আর এই ভেরিফিকেশন এর নামে ঘুষ চাওয়া নিয়ে যে দুর্নীতি চলছে তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের এক আইনজীবীও ভুক্তভোগী, তিনিও এই নিয়ে তাঁর অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন।
কিন্তু এবারের যে অভিযোগ টা উঠে এসেছে এক গৃহবধূর জবানবন্দিতে তা শুনলে রীতিমতো ঘৃণার উদ্বেগ হবেই। এবার আর ঘুষেই থেমে থাকেনি, মেঘা মজুমদার নামে মধ্যমগ্রামের এক গৃহবধূকে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের ছলে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে মধ্যমগ্রাম থানারই এক সিভিক ভলেন্টিয়ার ফিরোজ হোসেন। এমনটাই অভিযোগ গৃহবধূটির। স্বামী স্ত্রী উভয়ই বেশ কিছুদিন আগে পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেন। তারই কিছুদিনের মধ্যে মধ্যমগ্রাম থানায় গিয়ে মহিলাটির পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন হয়ে গেলেও স্বামীর বর্তমান বাসস্থান ও জন্মস্থানের ঠিকানায় গড়মিল থাকায় তাঁর ভেরিফিকেশন আটকে যায়।
ওঁনারা গত শনিবার থানার ডিআইবি বিভাগে ফোন করে স্বামীর ভেরিফিকেশনের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফিরোজ নামের একজন বলেন, আমি আপনাদের বাড়িতে এসে কথা বলছি। ঠিক এরপরই পুলিশ ভেরিফিকেশনের নাম করে ফিরোজ নামের ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারটি মহিলাটির বাড়ি যায়। তারপরই মহিলাটির স্বামীর কাছে পাসপোর্ট অ্যাপ্লিকেশন এর জেরক্স কপি চায়, তাতে তাঁরা বলেন যে, আপনাদের কাছেই তো জেরক্স জমা আছে, আপনি বরং ফোনে ছবি তুলে নিয়ে যান। তাতে সিভিক পুলিশটি বলেন না ছবিতে হবে না, আমার জেরক্সই লাগবে।
উপায় না দেখে গৃহকর্তাটি বেরিয়ে যান জেরক্স করতে, আর সেই সময় মহিলাকে ফাঁকা বাড়িতে একা পেয়ে জাপটে ধরে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। মহিলাটি প্রমাণের অভাবে ও পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন আটকে যাওয়ার ভয়ে তখন কোনো জোড়ালো প্রতিবাদ করতে পারেন না। তারপরই স্বামী জেরক্স নিয়ে ফিরে আসলেই হতচকিত হয়ে পুলিশটি দাদা পরে ফোন করবেন বলেই বেড়িয়ে যায়। পরে বিষয়টি তিনি স্বামীকে জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। তবে এখানেই থেমে থাকেননি গুণধর সিভিক পুলিশটি। বেরিয়ে আসার কিছু পরেই মহিলাটিকে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে নানান নোংরা, অশালীন মন্তব্য এবং হাম বিস্তার হওয়ার মত কু প্রস্তাব দিয়ে উত্তক্ত করতে থাকে।
আর এটাকেই প্রমাণের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে মহিলাটি পুলিশটির সাথে চ্যাটে বন্ধুত্ব সুলভ কথাবার্তা শুরু করে ( সেই সমস্ত চ্যাটিংয়ের ম্যাসেজের ছবি সাথে দেওয়া হলো) এবং যথেষ্ট ভদ্রভাবেই সেদিন ঠিক কি হয়েছিল কথার মাধ্যমে বের করে নেন। এর পরে সেই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের সমস্ত বাক্যালাপের স্ক্রিনশট তুলে প্রমাণ স্বরূপ তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল করে দেন সাহায্যের আর্তি জানিয়ে এবং মধ্যমগ্রাম থানায় ফিরোজের নামে এফআইআর দায়ের করেন বলে সুত্রের খবর।
তবে এই বিষয় নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন মধ্যমগ্রাম থানা। তারা এই বিষয় কিছুই বলতে নারাজ। তবে সুত্রের খবর অনুযায়ী, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুর সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, ইতিমধ্যেই অভিযোগকারিনীর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সমগ্র বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কিছুই বলা যাবে না। হমধ্যমগ্রামের উপপুরপ্রধান প্রকাশ রাহা বলেছেন, ওই বধূ তাঁর ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। তিনি থানার আইসিকে ইমিডিয়েটলি অ্যাকশন নিতে বলেছেন। বিশেষ সুত্রের খবর, এফআইআর রুজু হওয়ার পরেই পলাতক ফিরোজ হোসেন।
তবে এই ধরনের ঘটনা সমাজ ব্যবস্থাকে যে বার বার কলুষিত করছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কথায় আছে, “রক্ষকই ভক্ষক”, আজ তা আবারও হাতেনাতে প্রমাণ করে দিল ডি আই বি এর সিভিক ভলেন্টিয়ার ফিরোজ। আর এই কারণেই সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশ তার বীরোচিত মর্যাদা ও সম্মান হাড়িয়ে ফেলছে।