দুষ্কৃতিদের বোমা গুলির আঘাতে আহত হন মধ্যমগ্রামের বিনোদ সিং ওরফে রিংকু
HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি , মধ্যমগ্রাম ঃ গতকাল রাতে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্গত মধ্যমগ্রামের কদমতলা বাজার সংলগ্ন তৃণমূল পার্টি অফিসে আড্ডা চলাকালীন কিছু দুষ্কৃতি বোমা গুলি সহ হামলা চালায়। এই ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিনোদ সিং ওরফে রিংকু এবং তাঁর সহকর্মী দীপক বোস গুরুতর আহত হন। তাদের তড়িঘড়ি মধ্যমগ্রাম যশোর রোড সংলগ্ন এক বেসরকারি হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়। মুহুর্মুহু বোমা ও গুলিতে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার পথ চলতি সাধারন মানুষ।
আজ সকালে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ এই গুলি ও বোমাবাজির ঘটনার তদন্তে নেমে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে প্রায় ৫ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল থেকে আজ রাতভর অব্দি মধ্যমগ্রাম এর বিভিন্ন জায়গায় চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় এই পাঁচ জনকে। যদিও তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম জানাতে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশ কর্তারা।
অন্যদিকে এবিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্ব চাঁদ ঠাকুর সংবাদমাধ্যমকে জানালেন যে, মধ্যমগ্রামের এই দুষ্কৃতি হামলা কান্ডে আমরা এখনো অব্দি পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদেরকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, যাতে করে মূল পান্ডা বা অভিযুক্ত সহ বাকিদের খোঁজ পাওয়া যায়। সুত্রের খবর, আজ দুপুরে ধৃত পাঁচ জনকে বারাসত আদালতে তোলা হবে এবং তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে।এদিকে পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে, এই ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল অভিযুক্ত বিজন নন্দী ওরফে রাখাল এখনও পলাতক। তার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলচ্ছে। তৃনমূল কার্যালয়ের দিকে মুখ করা সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় দুষ্কৃতীদের তান্ডব এর ফুটেজ না পাওয়া গেলেও বেশকিছু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দুষ্কৃতীদের পালানোর ছবি ধরা পড়েছে। আর সেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখেই দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল দুষ্কৃতিদের ছোড়া গুলি বিনোদের মাথা ছুয়ে বেড়িয়ে যায় এবং বোমার স্পিলন্টার ছিটকে আহত হয়ে দীপক বোস। গুলি যেহেতু বিনোদের মাথা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে, তাই কোনো ঝুঁকি না নিয়ে রাতেই তাঁকে এলাকারই এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। যদিও এখন তাদের শারীরিক পরিস্থিতি বেশ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে এর জের স্বরূপ আগামীকাল বাজার এলাকায় ২৪ ঘন্টার জন্য বনধ্ ডেকেছে বিনোদ সিংয়ের তৃণমূল অনুগামীরা।
যেকোনো রকমের খবর ও বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন।
আর এদিকে পুলিশের অনুমান, যে গতকাল রাতের দুষ্কৃতী তান্ডবের পিছনে রাজনৈতিক কোনও কারন বা হাত নেই। জমিজমা ও সিন্ডিকেট ব্যবসার ভাগবাটোয়ারার জের নিয়েই এমন নৃশংস ঘটনার সুত্রপাত। গতকালকের তান্ডবের পর আজ সকালে সমগ্র এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল বেশ থমথমে। তৃনমূল কার্যালয়ের সামনে বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশের আর্মস ফোর্স গাড়ি।
এক বিস্বস্ত সুত্র থেকে জানা গেছে বিগত বেশ কয়েক বছর আগে মধ্যমগ্রামের দোহারিয়া এলাকায় জোড়া খুনের মামলায় জরিত ছিল বিজন নন্দি ওরফে রাখাল এবং বিনোদ সিং ওরফে রিংকু উভয়ই। যদিও গ্রেফতার করা হয় শুধু রাখাল নন্দিকেই, আর আদালতের নির্দেশে নাকি জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয় বিনোদ সিংকে। সেইসময় মধ্যমগ্রাম পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিলেন পেশায় প্রোমোটর বিনোদ সিং।
সুত্রের খবর, রাখাল ছিল বিনোদ সিং এর খুবই ঘনিষ্ঠ ও কাছের লোক। আর এই জোড়া খুনের মামলায় রাখাল ও বিনোদ দুজনেই অভিযুক্ত ছিল। যদিও আরও অনেক খুনেরই মূল পান্ডা ছিল রাখাল। তবে এই জোড়া খুনে শুধু রাখালকেই কেন সেদিন গ্রেফতার করা হয়েছিল? প্রশ্ন আম জনতার! তবে কি গতকাল এই এটেম্প টু মার্ডারের পিছনে সেই পুরানো ঘটনারই প্রতিহিংসা জরিত ছিল? নাকি নিছকই জমি সংক্রান্ত অর্থের ভাগবটোয়ারার জের মাত্র! পুলিশের তদন্তের পরেই পর্দা উন্মোচন হবে এই রহস্যের।