বসন্তের শুরুতেই রাজ্যে পক্সের বলি ১৭ : আইডি

0


HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ঃ বসন্ত এসে পৌছাতে পারল না, তার আগেই জলবসন্ত বা চিকেন পক্সে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বাড়ছে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর সংখ্যাও। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মিলিয়ে শুধুমাত্র বেলেঘাটা আইডিতেই প্রায় ১২ জন পক্সে আক্রান্ত মারা গিয়েছিলেন বলে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমেই স্বাস্থ্যভবনে একটা রিপোর্ট জমা পড়েছিল।

তবে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে, আইডি-তে আরও ৪ জন মারা গিয়েছেন জলবসন্তে। তার আগে আরও একজন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে মারা গিয়েছেন বলে সুত্রের খবর। ফলে চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যে এখনও পক্স বা বসন্ত রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, এত বাড়াবাড়ি না থাকলেও করোনাকালের আগেও এই মরসুমে জলবসন্তের প্রকোপ একই রকম ছিল।

সুত্রের খবর, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষেও এই আইডি হাসপাতালেও ৩৫ জন মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু অতিমারীর সময়ে পক্সের দাপাদাপি বেশ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু কোভিড চলে যেতেই ফের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে বসন্তের আক্রমণ। আইডি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ছোঁয়াচে চিকেন পক্স নিয়ে কমপক্ষে ৫৮ জন ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।

এর মধ্যে ডিসেম্বরে ৩ জন ও জানুয়ারিতে ৯ জন মিলিয়ে মারা গিয়েছেন প্রায় ১২ জন। সেই রিপোর্ট জমা পড়ার পরেও এই ফেব্রুয়ারি মাসেই আরও ৪ জন মারা গেলেন আইডি-তে। আরও জানা গিয়েছে, মৃতদের অর্ধেকেরও বেশি বয়স্ক ছিলেন। ফলে প্রায় সকলেরই কমবেশি কো-মর্বিডিটি ছিল। আক্রান্ত এবং মৃতদের মধ্যে তিন ভাগই পুরুষ। চিকিৎসকদের মতে, প্রাণঘাতী  নিউমোনিয়া ও এনকেফ্যালাইটিস সবচেয়ে ঝুঁকির কারণ বসন্তে আক্রান্ত রোগীদের জন্য।



আইডি হাসপাতালে গত ৩রা ফেব্রুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার খাতিব আলি (৪৭) ও ৭ তারিখ প্রশান্ত মণ্ডল (৫৭) মারা যান চিকেন পক্সে। ৮ই ফেব্রুয়ারি হালতুর অর্পিতা ব্যানার্জি (৩৭) মারা যান একই ভাবে। জানা গেছে, মৃতদের একটা বড় অংশই দেরি করে হাসপাতালে আসছেন। যার ফলেই এর প্রকোপ বাড়বাড়ন্ত বলেই দাবি স্বাস্থ্যকর্তাদের।

চিকিৎসকরাও বলছেন, ২০২৩ এ দাঁড়িয়েও জলবসন্তে আক্রান্ত হলে লোকে এখনও যে ঘরোয়া টোটকায় ভরসা রেখে চলেন, সেটাই ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ জ্বরের পাশাপাশি ত্বকে জলফোস্কার মতো র‍্যাশ বেরোলে মানুষ সহজেই বুঝে যান তা জলবসন্তের উপসর্গ। ঠিক তখনই মেথি ভেজানো জল সেবন না করে তৎক্ষনাৎ ডাক্তার দেখানো উচিত। তা হলে দু’-তিন দিনের মধ্যেই অ‌্যান্টি-ভাইরাল ওষুধের প্রভাবে রোগটা অর্ধেক নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

তাঁরা আরও বলেন এখনও যাঁদের পক্স হয়নি, তাঁদের অতিশীঘ্রই জলবসন্তের টিকা ভ্যারিসেলা ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। কেননা, পক্স হলে ছোটদের চেয়ে বড়দেরই জটিলতার ঝুঁকি বেশি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভ্যারিসেলা ভ্যাকসিন  নিয়ে নিলে অনেকটাই সুরক্ষা মেলে। এরপরেও কারও পক্স হতে পারে, কিন্তু তার তীব্রতা খুবই কম হয়। তবে একবার চিকেনপক্স হয়ে গেলে এ প্রতিষেধকের আর দরকার পরে না৷ বাড়িতে কারও চিকেনপক্স হলে, সে বছর আর প্রতিষেধক নিয়ে কোনো লাভ না-ও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

তাঁরা বলছেন, এমনিতে এই ভ্যাকসিন নেওয়া যায় ১৫ মাস বয়সের পর থেকে যেকোনও সময়ে৷ একদম ছোটদের ক্ষেত্রে ১৫-১৮ মাস বয়সে প্রথম ডোজ় আর ৪-৬ বছর বয়সে দ্বিতীয় ডোজ় নিতে হয়। বয়স ৭ বছরের বেশি হলে প্রথম ডোজ় নেওয়ার পর ৬-৮ সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ় নিতে হয়। ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন হাসপাতালের মতো আইডি-তেও পক্স টেস্টের ব্যবস্থা নেই, তাই সেই উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরে সুপারিশ করা হয়েছে।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply