কাজ হারিয়ে অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন এক পরিযায়ী
HnExpress ৬ই জুলাই, ঝুম্পা দেবনাথ, গড়বেতা ঃ কাজ হারিয়ে অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন এক পরিযায়ী শ্রমিক। বর্তমানে, কোভিড-১৯ শুধু মানুষের শরীরে যে মরণ থাবা বসাছে তাই নয়, কর্মস্থলেও রোজগার বিহীন করে দিয়ে মানুষের মনকে অবসাদগ্ৰস্তও করে তুলছে। ভিন্ন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরাও এই কাজ হারানো জন্য অবসাদের যন্ত্রণা থেকে বাদ যাচ্ছেন না।
বিশেষজ্ঞদের মত, করোনার দরুন পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার মাত্রাতিরিক্ত বাড়ার পাশাপাশি ক্রমাগত বেড়ে চলছে অবসাদগ্রস্ত মানুষের সংখ্যার হারও। ফলত অনেকেই এই অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র পথ হিসাবে গ্ৰহণ করছেন আত্মহত্যাকেই। তেমনই কর্মহীন জীবনের জেরে অবসাদে আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যা করলেন গুজরাট ফেরত এক পরিযায়ী শ্রমিক মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা ৩ নম্বর ব্লকের কাঞ্চনগিরির গ্ৰামের ২৫ বছর বয়সী অসীম ঘোষ।
গত শুক্রবার সকালেই বাড়ির অদূরে স্কুলের সামনে একটি গাছে গলায় ফাঁস লাগানো দেহ দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে, পুলিশ এসে ওই মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠান। তবে কোন সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। মৃতের বাবা দীপক ঘোষ জানান, গুজরাট থেকে তিনি কুড়ি-বাইশ দিন আগেই এই কাঞ্চনগিরি গ্ৰামে এসেছিলেন এবং ১৪দিন স্কুলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থেকে তারপর বাড়িতে ঢোকেন।
বেশকিছু দিন ধরেই অবসাদকে সঙ্গী করেই ঘুরছিলেন তিনি। যদিও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সবার সাথে নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যবহারই করেছিলেন তিনি। বন্ধুদের সাথে যাচ্ছি বলে বেরিয়ে আর সে রাত্রে বাড়ি ফেরেননি। এবং পরদিন সকালবেলা গাছে তাঁর ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। মৃতের বাবা দীপন ঘোষ সন্তান হারানোর ব্যাথায় কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং তিনি জানান, অসীম ঘোষ একটু জেদি স্বভাবের মানুষ ছিলেন বটে, তবে বেড়াতে যাচ্ছি বলে যে এরকম ঘটনা ঘটাবে তিনি বুঝতেই পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে জানা যায় যে, বেশি টাকা উপার্জনের আশায় গুজরাটের এক বেসরকারি সংস্থায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন অসীম ঘোষ। কিন্তু লকডাউনের জন্য ওই সংস্থা বেশকিছু শ্রমিককে ছাঁটাই করলে, ফলে অসীম ঘোষও তাঁদের সাথে গ্ৰামে ফিরে আসেন। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, খবর নিয়ে জানা গেছে যে, লকডাউনের প্রথমদিকেই তিনি বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। এর পর তিনি দু-বার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছিলেন। তখন তাঁকে দ্বারিগেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং পরে সুস্থ হয়ে বাড়িও চলে এসে ছিলেন তিনি।
তবে ঠিক কি কারণের জন্য তিনি জীবনের ইতি টানলেন তা খতিয়ে দেখছেন পুলিশ। গড়বেতার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকাশদ্বীপ সিনহা বলেন, এমন ঘটনার কথা তিনি জানেনই না। ঠিক কি হয়েছে তিনিও খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন বলে জানান। এমনই নানা অবসাদকে ঘিরে আত্মহত্যার ঘটনা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর জন্য সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলছেন বিরোধীমহলও। তাঁদের দাবি, এ রাজ্য বেকারত্বের মতো এক অভিশাপকে বহুকাল ধরেই বহন করে চলছে।
কিন্তু করোনার প্রভাবে রোজগার হারিয়ে পেটের জ্বালাকে সহ্য করতে না পেরে অনেকেই এই অবসাদকে সঙ্গী করে ফেলেছেন। আবার কেউ কেউ এই অবসাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যাও করছেন। কিন্তু সরকার সেই দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ না করে ভোটের প্রচারেই নিজেদের নিয়েই অনেক বেশি মনোনিবেশ করছেন, হ্যাঁ এমনটাই সোর উঠেছে বিরোধী মহলে। আবার বিরোধী মহলের একাংশ দাবি তুলছেন যে, এই কঠিন পরিস্থিতিতেও সরকারের উচিত অসহায় পরিবারকে শুধু রেশনের চাল, গম না দিয়ে পাশাপাশি রুজি-রোজগারের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হোক।