ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হিঙ্গলগঞ্জ এর মানুষের পাশে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির একটি মানবিক উদ্যোগ—
HnExpress ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত, হিঙ্গলগঞ্জ ঃ একে করোনার জ্বালা, তায় ঘূর্ণিঝড় দোসর। গত বছর বিশ্ব তথা দেশে আছড়ে পড়ে করোনা মহামারী সংক্রমণ। আর সেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশ জুড়ে জারি করা হয় কড়া লকডাউন। কিন্তু তা সত্বেও বাগে আনা যাচ্ছিল না করোনা সংক্রমনের হার। তার মধ্যেই বিধ্বস্ত মানুষকে আরও দুর্বিপাকে ফেলতে উপস্থিত হয় আম্ফান ঘূর্ণিঝড়। তার বিধ্বংসী তান্ডবে তছনছ হয়ে যায় দুই ২৪ পরগনা সহ মেদিনীপুর এবং বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবন অঞ্চল।
বর্তমান বৎসরেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ায় টালমাটাল অবস্থা দেশের। তার মধ্যেই আবারও এসে হাজির সুপার সাইক্লোন ইয়াস। আম্ফানের ভয়াবহতার রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে মেদিনীপুর সহ বেশ কিছু জেলা বিধ্বস্ত এবং বিপর্যস্ত হয়ে পরে। যার মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকা। একে লকডাউনে কাজ না থাকায় এক দূর্বিষহ জীবনযাত্রা। তার মধ্যে ইয়াসের প্রলয় নৃত্যে সুন্দরবন এলাকার মানুষের খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র-বাসস্থানে পরেছে ভাটার টান।
এমতাবস্থায়, ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত সুন্দরবনের নিকটবর্তী এলাকার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের অন্তর্গত উত্তর রূপামারী গ্রামের অসহায় মানুষের দিকে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির উত্তর ২৪ পরগণা জেলার শাখা সংগঠন। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ড হিসেবে শিক্ষকদের নিয়ে নানা ট্রল করতে দেখা যাচ্ছে। যেখানে প্রায়ই পোস্ট করে বলা হচ্ছে, “লকডাউনে ঘরে বসেই সরকারি কর্মচারী হিসেবে শিক্ষকরা মোটা টাকার বেতন পেয়ে যাচ্ছে। তাদের সেই বেতন অর্ধেক করে অর্ধেকটা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হোক।”
কিন্তু এদিন সেই ট্রলকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে দেখালেন তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির শিক্ষক সম্প্রদায়। কথায় আছে, “বাবা মায়ের পরের স্থানই শিক্ষাগুরুর। আর সেই শিক্ষকরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। যাঁদের কাছ থেকে আগামী প্রজন্ম জীবনের ভালো মন্দের পাঠ অর্জন করে। এদিন তাঁরা মানুষ গড়ার কাজের পাশাপাশিও বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করে এক নজীর সৃষ্টি করলেন। রূপামারী গ্রামের অসহায় আর্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেন ভালোবাসার দান।
শিক্ষকদের কাজ যে শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় আজ তাঁরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তা প্রমাণ করে দিলেন। কোভিড বিধি লঙ্ঘন করে পেটের দায়ে মানুষের ঢল ছিল যেমন দেখার মতো, ঠিক তেমনিই দেখার বিষয় ছিল বাকরুদ্ধ অবস্থায় তাদের চোখে কৃতজ্ঞতার জলও। সুতরাং এটা বলাই যায়, মানুষ গড়ার কারিগর থেকে এখন দুর্দশাগ্রস্ত মানব জাতিকে বাঁচানোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন শিক্ষক সমিতি।
এদিন এই মহতী উদ্যোগকে সফল করতে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অজিত কুমার নায়েক, জেলা কনভেনর দেবব্রত সরকার, জেলা পর্যবেক্ষক তপন বৈদ্য সহ অসীম কুমার নন্দ, শাহারিয়া ইসলাম, সমীর জানা, পার্থ বোস, অরূপ গিরি প্রমুখ বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কমিউনিটি কিচেন করে প্রতহ্য তাদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া হচ্ছে, যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করছেন তাঁরাও।