২১ শে’র ব্রিগেড ভরপুর, বাংলার পালাবদলের লক্ষ্য নিয়ে কংগ্রেস ও সেকুলার ফ্রন্ট নির্মাতা আব্বাস সিদ্দিকির সাথে জোট বামেদের

0

HnExpress প্রিয়দর্শী সাধুখাঁ, ব্রিগেড ঃ ২১ শের বিগ্রেড ছিল ভরপুর, বাংলার পালাবদলের লক্ষ্য নিয়ে কংগ্রেস ও সেকুলার ফ্রন্ট নির্মাতা আব্বাস সিদ্দিকির সাথে জোট বামেদের। প্রসঙ্গত, বিরোধীদের কথাতে পালাবদলের পর থেকেই সিপিআইএম নিশ্চিহ্ন কিংবা তাদের দূরবীন দিয়ে দেখতে হবে এমন একটা পরিসংখ্যান। বাম সরকার ক্ষমতা চ্যুত হয়েছে, সেটা ২০১২ সালের প্রেক্ষাপট। কিন্তু সেই বিগ্রেড সমাবেশ দেখে মনে হয়নি যে টানা ৩৪ বছরের সদ্য সমাপ্তি ঘটেছে।

এরপর ২০১৯ সালের ফ্রেবুয়ারী মাসের প্রথম দিকের কথা। ব্রিগেডের ময়দানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লক্ষ লক্ষ জেদি কর্মী-সমর্থককে মাঠ আঁকড়ে বসে থাকতে দেখে সূর্যকান্ত মিশ্র লোকসভা নির্বাচনে এই ভাবে মাটি কামড়ে বুথে লড়াই করার ডাক দিয়েছিলেন। এরপর কালের পালাবদলের পর ২০২১ উপস্থিত, সাথে নিয়ে বিধানসভা নির্বাচন। নিজের প্রচারে ব্যস্ত প্রতিটা রাজনৈতিক দল। লক্ষ্য একটাই ২০২১ এর নির্বাচনে বাংলার সিংহাসন জয়লাভ। তাই এই ব্রিগেড জমায়েতে বাম ও কংগ্রেস জোট এর সাথে দোসর ছিল আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট।

সাদা পাঞ্জাবি ও কালো কোট পরিহিত আব্বাস সিদ্দিকি ওরফে ভাইজানের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতোই। এছাড়াও বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেবলীনা হেমব্রম, মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরী, ভূপেশ বাঘেল, ডি রাজা, সীতারাম ইয়েচুরি, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, জিতিন প্রসাদ, নরেন চট্টোপাধ্যায়,
স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ঐশী ঘোষ, দিপ্সিতা ধর ও ঘোষকের ভূমিকাতে বাদশা মৈত্র। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, তৃণমূল বিজেপি এখন তরজা গান করছে। ব্রিগেডের প্রচার নষ্ট করার চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু এই সমাবেশ ঐতিহাসিক।

তিনি আরও বললেন, এই সরকার মানুষকে শোষণ করছে। তাই কোনও উস্কানিতে কান দিয়ে লাভ নেই। আমরা কাজ চাই। উনি দিদিকে বলো, তারপর পাড়ায় পাড়ায় সব সমাধান করলেন। কিন্তু, এমন সমাধান করলেন যে পুরো দলটাই প্রায় বিজেপি হয়ে গেল।’ এদিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধির চৌধুরী বললেন যে, ‘মোদী-মমতার রাজনৈতিক ডিএনএ এক। ওরা চাইছে বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি ছাড়া আর কিছু থাকবে না। আর আমরা বলছি, আগামীতে তৃণমূল-বিজেপি নয়, শুধু সংযুক্ত মোর্চাই থাকবে।’

মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘কেউ কেউ বলল খেলা হবে। আর মোদীজি স্টেডিয়ামটাই দখল করে নিলেন। বসন্ত এসে গিয়েছে। পলাশ সহ লাল রাঙা ফুল ফুটছে। তাই বামেদের কেউ আর আটকাতে পারবে না। কয়েকশ কর্মী খুন হয়েছেন, ভুয়ো মামলায় জড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাও লাল ঝান্ডাকে কেউ শেষ করতে পারেনি। বসন্ত মানে শুধু পলাশ নয়, সঙ্গে ফুটুক কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়াও। তাইতো আজ ব্রিগেডে এসেছেন আইএফএস ও কংগ্রেস। সিপিআই নেতা ডি রাজা বলেন যে, “গান্ধীজি বলেছিলেন ভগাবন সবাইকে সুবুদ্ধি দিন।

তবে সবার নয়, এখন ৩ জনের সুবুদ্ধি চাই। এঁরা হলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ আর মোহন ভগবত। মোদী বলেছিলেন আমি প্রধানমন্ত্রী নই, প্রধান সেবক। জবাব দিন আপনি কার সেবক?’ এরপরই তিনি বলেন, ‘আর এর সাথে তৃণমূল সরকারও পুরোপুরি ব্যর্থ। তৃণমূল-বিজেপিকে হটাতে হবে। সংযুক্ত মোর্চাকে জেতাতে হবে।’
সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা যায়, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এ বারের জোট আলোচনার শুরুতেই সিপিএমের কাছে ১৩০টি আসনের দাবি জানিয়েছিল কংগ্রেস। ইতিমধ্যে তাঁদের দাবি মেনে, ৯২টি আসনে তাঁদের প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তাবও মেনে নিয়েছে বামফ্রন্ট।

ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (ISF)-এর প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকি ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, ‘বামেরা আমাদের দাবি অনুযায়ী আসন ছেড়েছেন। আগামী দিন বিজেপি ও বিজেপিরই টিম মমতাকে উৎখাত করব। আগামী নির্বাচনে মমতাকে শূন্য করে ছাড়ব। যেখানেই বামেরা প্রার্থী দেবে, সেখানেই রক্ত দিয়ে জেতাব। যদি এই সমঝোতা আরও এক সপ্তাহ আগে হত, তাহলে দ্বিগুণ মানুষের জমায়েত করতাম। কারণ বাংলার মানুষ মমতার সরকারের উপর ক্ষিপ্ত। বিজেপি ও তৃণমূলকে উৎখাত করবই। মমতা মানুষের অধিকার হরণ করেছে।

তিনি আরও বললেন, এই নির্বাচনে বুঝিয়ে দেব। সবাই এখন ভয়ে রয়েছে। মমতাকে শূন্য করে দেব। এ বাংলায় যখনই কালাে হাত পড়েছে, তখনই সে কালাে হাত ভাঙা হয়েছে। আমাদের শপথ বিজেপির কালাে হাত ভাঙতে হবেই। বাংলার মানুষ মমতা সরকারের দুর্নীতির ওপরেও ক্ষিপ্ত। আমরা বাংলা দখল করব, গণতন্ত্র বাঁচাব, বেকারদের কাজ দেব, সবার পেটে ভাত দেব, সবার জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্যর ব্যবস্থা হবে আবার।’ যদিও আব্বাসের হুঙ্কারকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল কিংবা বিজেপির কেউই।

সূত্রের খবর, বিগত ৩৪ বছরের বাম জমানার অন্তিমকালে যেমন বাম নেতারা বিরোধী দল নেত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গুরুত্ব দিতো না। কারণ তাঁরা জানতো না তাদের দিন শেষ হয়ে গেছিল। ফলস্বরূপ ২০১১ এর পরেই পতন হয়েছিলো সিপিএমের। ব্রিগেড সম্পর্কে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলছেন, ‘এত রক্ত দেওয়ার দরকার নেই। বাংলায় মমতার সরকার সুষ্ঠুভাবে চলছে, ওরা যা বলল, তা মানুষের বক্তব্য নয়। পাগলে কী না বলে, আর ছাগলে কী না খায়। আমাদের কাছে ওর কথার মূল্য নেই।’

জোট যাই হোক না কেনো আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে, কারন সূত্রের খবর আব্বাস সিদ্দিকি তৃণমূলের সঙ্গেই ছিল গত নির্বাচনে। ধরা যাক নির্বাচনের পর এমন পরিস্থিতি হ’ল যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর দল মাত্র কয়েক সীট এর জন্যে গরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। যে কটার জন্য গরিষ্ঠতা পাচ্ছে না সেই সিট গুলি বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও আব্বাস সিদ্দিকির কাছে আছে। বামফ্রন্ট সিট ক্রয়-বিক্রয় এর দিকে না গেলেও কিন্তু কংগ্রেস কিম্বা আব্বাস সিদ্দিকি? জোট বাড়লে শঙ্কা অমূলক। ইতিমধ্যে তেজস্বী যাদব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাথে জোট করতে ব্যস্ত বামফ্রন্টকে পিছনে ফেলে রেখে।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply