September 18, 2024

২৯ জানুয়ারি স্মরণীয় সংবাদপত্র জগতে, পিছিয়ে নেই কলকাতা প্রেস ক্লাব

1
Advertisements

HnExpress সম্রাট গুপ্ত, ২৯জানুয়ারি, কলকাতা : কলকাতায় ছিলেন এক পাগলা সাহেব। নাম ছিলো তাঁর জেমস অগাস্টাস হিকি। এই আইরিশম্যান ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় কাজ করে গিয়েছিলেন। আজ ২৯ জানুয়ারি সেই স্মরণীয় ঘটনার জন্মদিন।

ভারত উপমহাদেশ এর সর্বপ্রথম ইংরেজি পত্রিকাটা বের হয়ে আসে তাঁরই হাত দিয়ে। শুধু ইংরেজি বলেই নয়, এটিই ছিলো ভারতের প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা। সালটা ছিল ১৭৭০, শীতকাল এর সময়। দিনটি ছিল জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ। বের হল ‘বেঙ্গল গেজেট’। কলকাতার ইতিহাসের প্রথম পত্রিকা তো বটেই, ভারতের ইতিহাসেরও প্রথম। ‘লন্ডন টাইমস’ও তখন বের হয় নি। বের হয়েছিলো এর আরো আট বছর পরে।

প্রতি সপ্তাহে বের হতো ‘বেঙ্গল গেজেট’। দুটি করে পাতা থাকতো। বারো বাই আট ইঞ্চি – এই ছিলো কাগজের আকার। দুই পৃষ্ঠাতেই ছাপা থাকতো তিন কলাম। তবে, খবর যতটা থাকতো, তার সমপরিমাণ থাকতো বিজ্ঞাপন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতে থাকা ব্রিটিশ সৈন্যদের মধ্যে পত্রিকাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শুধু ব্রিটিশদের মধ্যেই যে এটি জনপ্রিয় হয় তা নয়, ভারতীয়দেরকে বিশেষ করে কলকাতার বাঙালিদের বাংলা ভাষায় পত্রিকা প্রকাশের জন্য দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। পত্রিকাটি দুই বছর চালু ছিলো।

হিকি সাহেব ছাড়া এই পত্রিকায় আর কোনও সাংবাদিক ছিলেন না। তিনিই এর সম্পাদক, তিনিই সাংবাদিক, তিনিই প্রকাশক। তিনি নিজে যে রকম খবর জোগাড় করতে পারতেন, সে রকমই ছাপতেন। তবে, রসালো কেচ্ছার প্রতি তার বেশ নজর ছিলো।

পাগলা হিকি লোকজনের নানা রকমের রসাল নামকরণ করে রসের হাট বসাতেন বেঙ্গল গেজেটে। কাউকে পরোয়া করতেন না তিনি। লাট সাহেবের প্রসঙ্গ থাকলেও বাদ যেতো না তা ছাপা হতে বেঙ্গল গেজেটে। লাট সাহেবের বউয়ের প্রতি কেনো যেন আক্রোশটা একটু বেশি ছিলো তাঁর। লেডি হেস্টিংসকে নিয়ে নানা ধরনের রসালো কাহিনী ফাঁদতেন তিনি।

পাগলা হিকির এই রকম পাগলামিতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন সাহেবরা। তাদের সব কেচ্ছা-কেলেংকারি ফাঁস করে দিচ্ছিলেন হিকি। তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করছিলেন প্রতিনিয়ত। ভয়ংকরভাবে আক্রমণ করছিলেন একেকজনকে। ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নিচ, কোনো কিছুর ভেদাভেদ ছিলো না হিকি সাহেবের কাছে। সুযোগ পেলেই তাদের দেহে বিষ ঢেলে দিতেন তিনি। হিকির এই কাজে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস মহাখাপ্পা হয়ে উঠেছিলেন। হিকি যে শুধু তাকেই আক্রমণ করতেন তা নয়, তাঁর বউকেও ছেড়ে কথা বলতেন না।

তো ওয়ারেন হেস্টিংস তাকে জেলে পুরে দিলেন। হিকি সাহেব তাঁর পোর্টেবল ছাপাখান‍া নিয়ে ঢুকে গেলেন জেলের ভেতরে। জেলখানা তাঁর জন্য নতুন কোনো জায়গা নয়। দেশে থাকার সময়ে হিকি কাজ করতেন মুদ্রাকরের। ভারতে এসেছিলেন ভাগ্যান্বেষণে। ব্যবসা করে ভাগ্য ফেরাবেন, এটাই ছিলো ইচ্ছা। ব্যবসা আরম্ভ করলেনও, কিন্তু ব্যবসা জমলো না। টাকা আয় করতে গিয়ে উলটো অনেক ধার দেনায় পড়ে গেলেন। সে ধার আর শোধ দিতে পারেন নি। ফলে দুই বছরের মতো জেল খেটেছিলেন।

সেই একই জায়গায় আবার ফিরে এসেছেন তিনি। কাজেই, খুব একটা বিকার নেই তাঁর। বরং এইবার পোর্টেবল ছাপাখানা আছে তাঁর সাথে। জেলে বসেই পত্রিকা চালু রাখলেন তিনি। বের হতে লাগলো বিষধর সব রিপোর্ট।

হেস্টিংস দেখলেন, এতো মহা বিপদ। পাগলা তো জেলে বসেও সেই একই কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে, শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলেন হিকির কাছ থেকে তাঁর পোর্টেবল ছাপাখানাটাকেও কেড়ে নিতে। হিকি সাহেবেরও সাংবাদিকতার ইতি ঘটলো এখানে। সে সময় ভারতে দায়িত্ব পালন করা ব্রিটিশ সৈন্যদের কাছেই শুধুমাত্র পত্রিকাটি জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি সাথে সাথে এটি ভারতীয়দের নিজেদের পত্রিকা প্রকাশে উৎসাহিতও করেছিল।

পত্রিকাটিতে মূলত বিজ্ঞাপন, বিদেশি ইংরেজি পত্রিকা থেকে উদ্ধৃতি ও সংবাদদাতাদের বিবরণধর্মী লেখা ছাপা হতো। “পোয়েটস কর্ণার” নামে একটি বিশেষ অংশ ছিল। প্রকাশের প্রথম মাসে কোন রাজনৈতিক বিবাদপূর্ণ লেখা ছাপা হয়নি। পরে প্রশাসনের বিরোদ্ধে কিছু লেখা বের হলে ১৭৮০ সালের ১৪ই নভেম্বর ফোর্ট উইলিয়াম থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ডাকঘর মারফর পত্রিকা বিতরণ বন্ধ করা হয়। এটি দুই বছর পর্যন্ত প্রকাশ হয়েছিল। ১২ ইঞ্চি দীর্ঘ ও ৮ ইঞ্চি প্রস্থ দুই পৃষ্ঠার এ পত্রিকাটি ২৩শে মার্চ ১৭৮২ সালে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে হিকি মামলায় জড়িয়ে পড়েন।

এই দিনটির স্মরণে এক বিরাট রক্তদান শিবির এর আয়োজন করেছে কলকাতা প্রেস ক্লাব। চলবে বেলা সওয়া তিনটে পর্যন্ত।

সুত্র ঃ— ফরিদ আহমেদ।

Advertisements

1 thought on “২৯ জানুয়ারি স্মরণীয় সংবাদপত্র জগতে, পিছিয়ে নেই কলকাতা প্রেস ক্লাব

Leave a Reply