হালিশহর পুরসভায় ফের ধুন্ধুমার কান্ড : ব্রেকিং নিউজ
HnExpress দেবাশিস রায়, হালিশহর : পুরপ্রধানের ঘরে ঢোকাকে কেন্দ্র করে আজ সোমবার ১০ সেপ্টেম্বর সপ্তাহের প্রথম দিনেই ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল হালিশহর পুরসভায়। ঘটনা সূত্রে প্রকাশ, এদিন দুপুর পৌনে একটা নাগাদ কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাস ও প্রণব লোহ-র নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের ১১ জন পুর সদস্য পুরপ্রধানের ঘরে দলবেঁধে ঢুকতে যান। এসময়ে কর্মরত পুরসভার পিওন সুবীর সরকার পুরপ্রধান অংশুমান রায়ের অনুমতির নেওয়ার জন্য ভেতরে যান। এসময় পুর কাউন্সিলররা সুবীরকে টপকে পুরপ্রধানের ঘরে প্রবেশ করতে উদ্ধত হন। তাঁদের এভাবে বিনা অনুমতিতে ঘরে ঢুকতে দেখে তাদের প্রতিহতে করতে এগিয়ে আসেন পুরপ্রধানের সরকারি দেহরক্ষী মানস রায়। আর এতেই গোল বাঁধে। শুরু হয় ধ্বস্তাধ্বস্তি। অবস্থা খতিয়ে দেখতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন স্বয়ং পুরপ্রধান অংশুমান রায়। কাউন্সিলররা সমবেতভাবে তাঁর দেহরক্ষী যে তাঁদের হেনস্থা ও ধাক্কা দিয়েছেন বলে অভিযোগ জানাতে থাকেন। এই কাউন্সিলরদের মধ্যে কয়েকজন মহিলা পুরসদস্যাও ছিলেন। অংশুমানবাবু এসময় সরাসরি ফোন করে এবিষয় কথা বলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু ফোনে কথা বলেন মৃত্যুন্জয় দাস ও প্রণব লোহ-র সঙ্গেও। তিনি কাউন্সিলরদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন জানানোর পর তাঁরা চলে যান পুরপ্রধানের ঘরের সামনে থেকে। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর সঙ্গে কথা বলার আগে পর্যন্ত ওই ১১জন কাউন্সিলর পুরপ্রধানের ঘরের সামনে উচ্চরবে শোরগোল করতেই থাকেন।
এদিকে, পুর পার্ষদ মৃত্যুঞ্জয় দাসের অভিযোগ, তাঁরা জানেনই না পুরপ্রধানকে দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে এবং তাও আবার সরকারিভাবে। তিনি জানান, এদিন তাঁরা বাংলা বন্ধে পুরসভায় উপস্থিতির হার ও এলাকায় বন্ধ কতটা অসফল হয়েছে এবিষয় নিয়ে আলোচনার জন্যই গিয়েছিলেন। এসময় পুরপ্রধানের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাঁদের কয়েকজন কাউন্সিলর, যেমন- জিয়াউল হক, বন্ধুগোপাল সাহা, প্রণব লোহ, মহাদেব বিশ্বাস-সহ বেশ কয়েকজনকে হাত ধরে টেনে এনে পুরপ্রধানের ঘরে ঢোকা থেকে বিরত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে নাকি তাঁদের সম্মানে আঘাত লাগে। পাশাপাশি উপস্থিত কাউন্সিলররা অভিযোগ করতে থাকেন, পুরপ্রধান নাকি কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলার সময়ই পান না, ঠিকাদার ও সিপিএম নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। কর্মী নিয়োগ নিয়েও তাঁরা অভিযোগ জানাতে থাকেন।
যদিও পুরপ্রধানের দেহরক্ষী জানিয়েছেন, তিনি প্রায় একমাস ধরেই এখানে কর্মরত। কাউন্সিলররা তাকে চেনেন না বা তা জানেন না এটা ঠিক সত্যি কথা নয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি গত মাসে কাঁচরাপাড়া পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গণ্ডগোল হয়। এই ঘটনা হওয়ার পর কাঁচরাপাড়ার পুরপ্রধান সুদামা রায় ও হালিশহরের প্রধান অংশুমান রায়কে সরকারি দেহরক্ষী দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ২১শে জুলাইয়ের কয়েকদিন আগে হালিশহর টাউন যুব তৃণমূলের তৎকালীন সভাপতি প্রণব লোহ-র নেতৃত্বে রাস্তাঘাট সংস্কারের দাবি নিয়ে পুরসভায় বিক্ষোভ দেখান। ফলস্বরূপ তাঁকে পদ হারাতে হয়। সারা বীজপুরে যুব তৃণমূলের কনভেনর করা হয় কাঁচরাপাড়ার কাউন্সিলর সুজিত দাসকে।
এ সমস্ত অভিযোগ ও আজকের ঘটনা নিয়ে বিশেষ সাক্ষ্যাৎকারে পুরপ্রধানকে HnExpress ডিজিটাল মিডিয়ার সংবাদ প্রতিনিধি প্রশ্ন করায় তিনি জানান, পুর সদস্যরা যেকোনও সময় তাঁর ঘরে আলোচনার জন্য আসতেই পারেন। তবে তারজন্য ন্যূনতম সৌজন্যবোধটা বজায় রাখা উচিত। এবং আমার ঘরে ঢোকার সময় কোন সমস্যা হলে সর্বোপরি আমাকে একটা ফোন করে জানানো উচিত। এই সামান্য কারণে একজন কর্তব্যরত সরকারি দেহরক্ষীকে অকথা কুকথা বলা বা তার সাথে হাতাহাতিতে মেতে ওঠা টা মোটেও শোভন নয়। তবে কেউ যদি গত শুক্রবার প্রকাশিত নিয়োগ পরীক্ষার ফল নিয়ে কোন অভিযোগ করে থাকেন তবে আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করছি, স্বচ্ছতা নিয়েই নিয়োগ হবে। প্রাধান্য দেওয়া হবে দলীয় ও ঠিকাকর্মীদেরই।
কিছুক্ষণ এর মধ্যেই ঘটনাস্থলের সরজমিন তদন্ত করতে এসে পৌঁছায় বীজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি কৃষ্ণেন্দু ঘোষ।