সমাজকর্মী সুদীপ্তর গ্রেপ্তারিতে ক্ষোভে ফুঁসছে বীজপুরের পিছিয়ে পড়া মানুষেরা

0

HnExpress দেবাশিস রায়, হালিশহর : কাঁচরাপাড়ার কুলিয়া রোডে তৃণমূলের গোষ্ঠী কলহের জেরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দলের দুই যুবনেতা সুদীপ্ত দাস ও রাজা সরকারকে। বিষয়টি আপাতত বারাকপুর আদালতের বিচারাধীন। এর মধ্যে আদালত দু-দুবার এদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। প্রথম দফায় তাদের তিনদিনের পুলিশ হেফাজত হয়। আর দ্বিতীয় দফায় তিনদিনের জেল হেফাজত হয়। বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর ফের তাদের আদালতে হাজির করানোর কথা।

এবিষয়টি নিয়ে অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে যেবিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে তা হল কাঁচরাপাড়া-হালিশহরের পিছিয়ে পড়া মানুষদের ক্ষোভ। কারণ, এই মানুষগুলোকেই যুবনেতা তথা সমাজকর্মী সুদীপ্ত তুলে দিয়েছে মুখের ভাত। সুদীপ্তর গ্রেপ্তারিতে এই ভাত যেকোনও দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই পিছিয়ে পড়া মানুষরা মেনে নিতে পারছেন না সুদীপ্তর গ্রেপ্তারি। জানা গেছে, মাসখানেক আগে সুদীপ্তই রামধনুর হেঁসেলের মাধ্যমে এই মানুষগুলোকে একবেলা খাওয়ার সংস্থান করে দিয়েছে। যার উদ্বোধনে এসেছিলেন ভাটপাড়ার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান অর্জুন সিং এবং একটি বেসরকারি নিউজ চ্যানেলের প্রধান স্বয়ং।

তবে কি বন্ধ হয়ে যাবে রামধনু-র এই হেঁসেল! সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষদের এই প্রশ্ন নিয়ে রামধনু-র কার্যালয়ে যেতেই জানা গেল, না কোনও কারণেই এই আয়োজন বাতিল হবে না। রামধনু-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বছরভরই চলবে এই হেঁসেল। আরও জানা গেছে, সুদীপ্ত-র উদ্যোগেই এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য ৩০ হাজার টাকার স্বাস্থ্যবিমাও করে দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল। কাজ চলছিল বীজপুরের ১২টি স্কুলের ২৪টি দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীর পঠনপাঠনের দায়ভার গ্রহণের কাজ। সবকিছুই চলবে, তবে রামধনু-র সদস্যদের অভিযোগ, কারও কারও প্ররোচনায় এই কর্মযজ্ঞ পণ্ড করার চক্রান্ত চলছে। তবে সেই চক্রান্ত সফল হবে না বলেও তাদের মত।
কথা প্রসঙ্গে ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং জানান, বাবা মুকুল রায় বিজেপিতে যাওয়ার পর শামুকের মতো খোলসে ঢুকে পড়েছিলেন বীজপুরের বিধায়ক। প্রায় এক বছর শীতঘুম কাটিয়ে এখন ছড়ি ঘোরাতে নেমেছেন শুভ্রাংশু। এই বছরখানেক যারা দলটাকে টিকিয়ে রেখেছিল আজ তাদেরই ফলস কেসে জড়াতে চাইছেন তিনি, নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে জোট বেঁধে। তাঁরা দলের ওপর মহলকে ভুল বুঝিয়ে ফয়দা তুলতে মরিয়া বলেও অভিযোগ করেন অর্জুন।

এরই পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। আর তা হল, বিধায়ক শুভ্রাংশু নাকি উঠেপড়ে লেগেছেন বীজপুরের আইসি-কে পদচ্যুত করতে। আর এই কারণেই লক্ষ্মীপুজোর দিন তিনি হালিশহরের ১১ জন কাউন্সিলরকে বাড়িতে ঢেকে পাঠান। কিন্তু তাঁরা যেতে না চাওয়ায় তিনিই হাজির হন হালিশহরে ওই কাউন্সিলরদের কাছে। সেখানে তিনি কাউন্সিলরদের আইসি-র বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করতে বলেন বলেও সূত্রের খবর। যদিও কাউন্সিলররা কেউই ওই অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেননি। এবিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল ১১ বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের মুখপাত্র প্রণব লোহকে। তিনি বলেন, বিধায়ক এসেছিলেন ঠিকই তবে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। তবে অাইসি-র বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে কাউন্সিলরদের স্বাক্ষরের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

এদিকে আদালতের সংবাদদাতার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ধৃত যুবনেতাদের জামিন নাও মিলতে পারে ওপর মহলের অঙ্গুলিহেলনে। তবে পরের শুনানি অর্থাৎ ১২ নভেম্বর আদালতের পূজাবকাশ মেটার পর তাদের জামিন আটকানো সম্ভব নয়। কেননা, যেসব ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে আদালতের নির্দেশে তার কোনও তথ্যই দিতে পারেনি পুলিশ। একটা বোমা বা আগ্নেয়াস্ত্র তো দূরস্ত বোমার সুতলি পর্যন্ত মেলেনি সুদীপ্তর কাছে। তবে রাজার বিষয়টি নিয়ে কেউই তেমন ভাবিত নয় বলেই মনে হল। কেননা, এই রাজাই ২০০৯-এর লোকসভা ভোটের আগে অর্জুন সিংয়ের মিছিলে হামলা চালিয়েছিল বাম জমানায়। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ২০১০-এর পুরভোটে শুভ্রাংশুকে তাড়া করছিল। পরে শুভ্রাংশুর হাত ধরেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিল। যদিও শুভ্রাংশু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করছেন যে ২০১৬-র পর থেকে তিনি রাজা ও সুদীপ্তকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সূত্রের খবর, ২০১৭-তেও হালিশহরের একটি ফুটবল কোচিং সেন্টারের ক্লাবঘর নিয়েও সুদীপ্তর সাহায্য নিয়েছিলেন।

Leave a Reply

%d bloggers like this: