November 15, 2024

করোনা ও লকডাউনের সাঁড়াশি আক্রমণেও বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ নিল হাওড়ার দেড় শতাধিক যৌনকর্মী

0
Advertisements

HnExpress ৮ই এপ্রিল, অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া : করোনা ও লকডাউনের সাঁড়াশি আক্রমণেও বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে হাওড়ার দেড় শতাধিক যৌনকর্মী। প্রসঙ্গত, হাওড়া জেলার অন্তর্গত আমতার কলাতলা থেকে একটি পাকা রাস্তা সোজা আমতা বাজার হয়ে চলে গেছে সিনেমাতলার মোড়ে। এই মোড় থেকে একটি পাকা রাস্তা ডান দিক দিয়ে সোজা মুন্সিরহাটের দিকে ও একটি পাকা রাস্তা আমতা থানার দিকে চলে গেছে।

সিনেমাতলা থেকে যে রাস্তাটি আমতা থানার দিকে চলে গেছে, সেই রাস্তার একটি অংশ ঢালমাথা হিসাবে পরিচিত। এই ঢালমাথার ডানদিক দিয়ে একটি পাকা রাস্তা সোজা পেরোলে বাস রাস্তায় মিলিত হয়েছে। এই ঢালমাথার চিত্রটা গত পনের দিনে আমূল পাল্টে গেছে। চারিদিক জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। কারণ, দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের সাঁড়াশি আক্রমণ ও তার মোকাবিলায় জারি হওয়া লকডাউনে দেখা নেই খদ্দেরদের।

 

 

তার ফলে বেঁচে থাকাটাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাওড়ার গ্রামীণ অঞ্চলের প্রায় দেড় শতাধিক যৌনকর্মীর। হাওড়ার গ্রামীণ অঞ্চলে মূলত দু’টি যৌনপল্লী আছে। একটি উলুবেড়িয়া গঙ্গা নদীর ধারে কালীবাড়ীর কাছে, আর একটি আছে আমতার সিনেমাতলার ঢালমাথার কাছে। এছাড়াও কিছু যৌনকর্মী বাউড়িয়া, সাঁকরাইল, ফুলেশ্বর, উলুবেড়িয়া, কুলগাছিয়া, বীরশিবপুর, বাগনান রেল স্টেশন এলাকায় অপেক্ষা করে খদ্দের ধরে তাদের নিয়ে স্থানীয় কোনো হোটেল বা কোনো নির্জন এলাকায় চলে যায়। এদের সংখ্যাটাও প্রায় পঞ্চাশের অধিক।


উলুবেড়িয়া ও আমতার যৌনপল্লীতে প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই যুবক থেকে বয়স্ক মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করে। রেট ঠিক করে যৌনকর্মীরা তাদের ঘরে নিয়ে যায়। দিনের শেষে যৎসামান্য রোজগারে কোনোরকমে হাঁড়ি চড়ে যৌনকর্মীদের ঘরে। কিন্তু দেশ জুড়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মোকাবিলায় লকডাউনের সাঁড়াশি আক্রমণে এক ধাক্কায় আজ সেই চিত্রটা বদলে গেছে। দু’ই যৌনপল্লী মিলিয়ে রয়েছেন প্রায় শতাধিক যৌনকর্মী। এছাড়াও ফ্লায়িং যৌনকর্মী আছে প্রায় পঞ্চাশের অধিক।

 

 

শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি যে, এই পেশার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকশো পরিবার নির্ভরশীল। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক উলুবেড়িয়ার এক যৌনকর্মী বিষন্ন কন্ঠে বলেন, “গতবার নোট বাতিলের জেরে বেশ কিছুদিনের জন্য ব্যবসার আংশিক ক্ষতি হয়েছিল। আর এবার করোনা ভাইরাস ও লকডাউনে ব্যবসা পুরোপুরি ক্ষতিগ্ৰস্ত।” এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ এক পক্ষকাল খদ্দেরদের দেখা না মেলায় চরম‌ আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন সমাজের অন্ধকারে থাকা মানুষ গুলোর।

অতি কষ্টে, কোনো রকমে অর্ধাহারে দিন কাটছে এই সমস্ত যৌনকর্মী ও এই পেশার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল পরিবারগুলির। এই করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় করমর্দন করতে পর্যন্ত নিষেধ করা হয়েছে, বলা হয়েছে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে। কিন্তু এই যৌন পেশায় সংস্পর্শ এড়ানো সম্ভব নয়। তাই সেই আতঙ্কে যৌনপল্লী মুখী হওয়া ছেড়েছেন এই সমাজেই বসবাসকারী খদ্দেররা। যার পাশাপাশি লকডাউনের জেরে মানুষ সচারাচর বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না, সঙ্গে আর্থিক সমস্যা তো রয়েছে।

 

 

যার ফলেই একদম ফাঁকা যৌনপল্লী ও রেলস্টেশন গুলি। অন্নসংস্থানের পাশাপাশি আছে বাড়িভাড়া, বিদ্যুতের বিল, সন্তান সন্ততিদের খরচ, কিভাবে অর্থ জোগাবেন তা ভেবেই কপালে চিন্তার ভাঁজ মাধ্যমিক পাশ বছর চল্লিশের অনিমার (নাম পরিবর্তিত)।অনিমা-র কথায় “করোনা ভাইরাসের আক্রমণ ও লকডাউনে আমাদের যৌনপেশার কর্মীদের সংসারে যেন বজ্রপাত ঘটিয়েছে। কিভাবে সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের অন্যান্যদের খরচ চলাবো ভেবেই পাচ্ছি না”।

 

১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী চম্পা, ইলা, শম্পা, মালতি, কেতকিদের (সকলেরই নাম পরিবর্তিত) জীবনের জলসাঘরটা বড়োই নিষ্ঠুরতম এক বৈচিত্র্যময় অধ্যায়। জীবন জুড়ে শুধু বেঁচে থাকার লড়াই আর লড়াই। তবে এই যুদ্ধক্ষেত্রে ওরা হারতে শেখেনি। প্রত্যেক মুহুর্তেই যেকোনো পরিস্থিতির বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে সগর্বে লড়তে যে শিখে গেছে ওরা। তাই ওদের দৃঢ় বিশ্বাস আজকের এই করোনা যুদ্ধেও ওরা জয়ী হবেই হবে।

 

 

আর লকডাউন শেষ হয়ে গেলে আবারও, আবারও খদ্দেররা ভিড় জমাবে সমাজ থেকে বিছিন্ন অন্ধকারে ডুবে থাকা এই পতিতালয়ের জলসাঘরের যৌনপল্লীতেই। আবারও দপ করে আলো জ্বলে উঠবে ওদের সুখ-দুঃখে ভরা ছোট্ট এক চিলতে সংসারে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আবারও দিন ফিরে আসবে এই সভ্য-ভদ্র সমাজে কোণঠাসা মানুষগুলির জীবনেও। কারণ তাদের ছাড়া যে এই সভ্য সমাজের শুদ্ধিকরণ বুঝি সম্ভব নয়!

 

Advertisements

Leave a Reply