মেদিনীপুর কলেজের সম্প্রসারণ হবে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে
HnExpress সম্রাট গুপ্ত, ২১ জানুয়ারি, মেদিনীপুর : দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির জন্য স্বশাসিত মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষকে বরাদ্দ করা হয়েছে পাঁচ একর জমি। সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের পর তৈরি করা হবে টেকনিক্যাল বিভাগ। মূল ক্যাম্পাসে প্রায় ১৫ একর জমি ছাড়াও আছে খেলার মাঠ।
বীর বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত ১৯২৮-২৯ সালে ছিলেন এই কলেজের ছাত্র। প্রাক্তনী ছিলেন শহিদ ১৯৩২-৩৩ এর প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, ১৯৩৩-৩৪ এর তিন দামাল ছেলে ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত ও নির্মল জীবন ঘোষ। ব্রিটিশরাজের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিলেন এই দামাল ছেলেরা। আরও অনেকের সঙ্গে এঁদের বাঁধানো ছবি রয়েছে মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র বেরার ঘরে। ইতিমধ্যে ঐতিহ্যপূর্ণ কলেজের তকমা পেয়েছে এই কলেজ।
গোপালবাবু বলেন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে ভবন তৈরির জন্য সরকারর কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা সহায়তা চাওয়া হবে। এর জন্য শীঘ্রই তৈরি হবে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর)। ‘স্কিল বেসড‘ পাঠ্যক্রমগুলিকে সেখানকার নয়া ভবনে স্থানান্তরিত করা হবে।
২০০৪-এ পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র এই কলেজ ছিল ‘এ+’ পর্যায়ের। এর পর ২০১২-তে ‘ন্যাক’ ফোর পয়েন্ট-ভিত্তিতে মূল্যায়ণ করতে শুরু করে। এতে ২০১৬ পর্যন্ত এই কলেজ ছিল রাজ্যে এক নম্বর প্রতিষ্ঠান। এই তথ্য জানিয়ে গোপালবাবু বলেন, “আমাদের ছিল ৩ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট, কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছিল ৩ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট। এর পর আমাদের হয়েছে ৩ দশমিক ৬০ পয়েন্ট।“
কীভাবে এই নজরকাড়া স্বীকৃতি পেল মেদিনীপুর কলেজ, তা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হল। কলেজের পরিচ্ছন্নতা এবং শৃঙ্খলা দেখার মত। অধ্যাপকদের মতে, কলেজের শৃঙ্খলার একটা অন্যতম প্রধান কারণ রাজনৈতিক ঝামেলা না থাকা। বিভিন্ন বিষয়ের দেখভাল করতে প্রতিটি ক্লাশের তিন জন সেরা পড়ুয়া, সঙ্গে শিক্ষক ও অশিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি করে দেওয়া হয় নানা কমিটি। তাই ছাত্র নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা তৈরির অবকাশ নেই।পাঁচ তলা বিশাল ভবন তৈরি হচ্ছে। খুব বড় মাপের দুটি আবাস ইতিমধ্যে রয়েছে কলেজ চত্বরে। এর মধ্যে ছেলেদের এবং মেয়েদের আবাসে যথাক্রমে ৫৭০ ও ১৮০ জনের থাকার অবকাশ আছে।
‘ন্যাক’-এর এই মূল্যায়নের নেপথ্যে অন্যতম দাবিদার কলেজের ইন্টারন্যাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)। এর প্রধান রাজেন্দ্রনাথ দত্ত জানান, এবার এই প্রথম রাজ্যপর্যায়ের কোনও সেমিনার হল এই কলেজে। পরীক্ষাগার-ভিত্তিক নানা বিষয় নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের বিশেষ তালিম দিচ্ছেন মেদিনীপুর কলেজের শিক্ষকরা। এ ছাড়াও,
গত প্রায় ২১ বছর ধরে ‘সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক কালচার’ নামে কলেজের একটি বিভাগ বিহার-ঝাড়খন্ড সহ বিভিন্ন এলাকার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালেয়র অধীনে থাকাকালন এই কলেজের রসায়ন বিবাগের স্নাতক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেনির প্রথম স্থান অধিকার করে আলোড়ন ফেলেছিলেন। এই তথ্য জানিয়ে গোপালবাবু বলেন, পরে তিনি খড়্গপুর আইআইটি-র অধ্যাপক হন। এ ছাড়াও কলেজের কৃতী প্রাক্তনীদের দীর্ঘ তালিকায় আছেন রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রাক্ত সচিব-কিউরেটর চিত্তরঞ্জন পন্ডা, সিধো কানহ ডহর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ দীপক কুমার মন্ডল, কলকাতা চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্ত, আইপিএস অফিসার হুমায়ুন কবীর, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিষ্ট্রার সন্তোষ কুমার ঘোড়ুই, বার্মিংহামের দক্ষিণ আলবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী সুশান্ত কুমার দে প্রমুখ।