ভবানীপুর থানার মানবিকতার ফলে পথ হারিয়ে ফেলা অটিস্টিক মহিলা ফিরে পেল তার পরিবারকে
HnExpress ওয়েবডেক্স নিউজ ঃ দিন কয়েক আগের ঘটনা। সকাল ১১টা নাগাদ হাজরা ক্রসিং-এ চিত্তরঞ্জন সেবা সদনের সামনে একজন অজ্ঞাত পরিচয়ের অটিস্টিক মহিলাকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন ভবানীপুর থানারই কয়েকজন কর্তব্যরত কনস্টেবল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, পথ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। অথচ পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে কোনও কথাই স্পষ্ট করে বলতে পারছিলেন না তিনি। কনস্টেবলরা দেরি না করে দ্রুত তাঁকে নিয়ে আসেন ভবানীপুর থানায়।
প্রথমেই জল ও খাবার দেওয়া হয় তাঁকে। তারপর, খানিক ধাতস্থ হওয়ার পর ফের তাঁর নাম ও ঠিকানা জানতে চান ভবানীপুর থানার অফিসারেরা। কোনওমতে শুধু নিজের নামটুকুই বলতে পেরেছিলেন মহিলা… মুনমুন দাস। কথা বলতে খুবই সমস্যা হচ্ছিল তাঁর।
মুনমুনদেবীর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ভবানীপুর থানার অফিসারেরা বুঝতে পারেন, তিনি খুব সম্ভবত অটিস্টিক অর্থাৎ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন একটি মানুষ। প্রসঙ্গত, অটিজম কোনও বড়সড় অসুখ নয়। শুধু এই ধরনের মানুষদের বিশেষ কিছু চাহিদা থাকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তো কয়েকটি বিশেষ শারীরিক সমস্যাও থাকে। এঁদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে প্রধান দু’টি ব্যাপারই হল ধৈর্য্য আর সহমমর্মিতা।
বাড়ি কোথায় জানতে চাওয়া হলে অনেক কষ্টে এরপর ‘কাঙালবেড়িয়া’ এবং ‘বিষ্ণুপুর’—শব্দ দু’টি বলতে পেরেছিলেন মুনমুনদেবী। ভবানীপুর থানার পক্ষ থেকে দ্রুত যোগাযোগ করা হয় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিষ্ণুপুর থানায়। কিন্তু কাঙালবেড়িয়া বেশ বড় আর জনবহুল অঞ্চল হওয়ায় মুনমুনদেবীর ঠিকানা ও পরিচিতি সম্পর্কে কোনও তথ্যই প্রাথমিক স্তরে জানাতে পারেননি বিষ্ণুপুর থানার অফিসারেরা।
যেকোনো রকমের খবর ও বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ।
ইতিমধ্যে ভবানীপুর থানার অফিসারেরা জানতে পারেন, প্রথমে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন মুনমুনদেবী। তারপর, সেখান থেকেই পথ হারিয়ে চলে এসেছিলেন হাজরায়। আর এর ফলেই এনআরএস হাসপাতালের সঙ্গে মুনমুনদেবীর যে কোনও সংযোগসূত্র আছে, তা বুঝতে পারছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
আর তাই বিষ্ণুপুরের কেউ বা ওঁনার আত্মীয় স্বজনরা কেই এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত কিনা জানতে ফের যোগাযোগ করা হয় বিষ্ণুপুর থানায়।
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষ্ণুপুর থানার সূত্রে অরিজিৎ দাস নামের একজনের সন্ধান মেলে। অরিজিৎ এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালের পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্টের চাকরি করেন। তাঁর ফোনে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, মুনমুন দেবী তাঁরই বোন। তিনি সত্যিই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এবং কথা বলতে খুবই অসুবিধে হয় তাঁর।
আর চিকিৎসার জন্যই বোন মুনমুন দেবীকে এনআরএস-এ নিয়ে এসেছিলেন অরিজিৎ বাবু। সেখান থেকেই কোনওভাবে নিখোঁজ হয়ে যান মুনমুন দেবী। তারপর পথ হারিয়ে চলে এসেছিলেন হাজরায়।
খবর পেয়েই তাঁর আরেক বোন লিলি দাসকে সঙ্গে নিয়ে ভবানীপুর থানায় চলে আসেন অরিজিৎ দাস। তিন ভাই-বোনের মিলন দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকে ভবানীপুর থানার কর্তব্যরত অফিসার সহ হোমগার্ড সোমা সাউ, অ্যাসিস্টেন্ট সাব ইনস্পেক্টর সীমা সাহা এবং সাব ইনস্পেক্টর হিমাদ্রি কাঞ্জিলাল। যাদের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে এই মহান কাজটি সুসম্পন্ন হয়। এই মহান কাজে তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেন ভবানীপুর থানার ওসি সুমিত দাশগুপ্ত।
তথ্যসূত্র ও চিত্র ঃ সোস্যাল মিডিয়া।