বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত, পিকনিকে মজেছেন আবালবৃদ্ধবনিতা
HnExpress পল মৈত্র, দক্ষিন দিনাজপুর : শীতের শুরুতেই ঝিরঝিরে বৃষ্টির জেড়ে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। সারা রাজ্যের সাথে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও ছিল একই পরিস্থিতি। গত দুদিন আগে হাওয়া অফিস থেকে জানানো হয় অন্ধপ্রদেশ দীঘা সহ সমুদ্র ও নদী উপকূলবর্তী এলাকা গুলোতে আছড়ে পড়তে চলেছে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ফেতাই। আর তারই রেশ পড়বে সারা রাজ্য জুড়ে। গতকাল থেকেই সারা রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে সেই ঝিরঝিরে বৃষ্টির সাথে নিম্নচাপ। তার জেরে এই শীতের সময় ঠান্ডার শুরুতেই বৃষ্টি আরো বেশি করে শীতের জানান দিচ্ছে, বৃষ্টির সাথেই হাড় হিম করা ঠান্ডা হাওয়ার জেড়ে কাবু আবালবৃদ্ধবনিতা।
এদিকে সারারাত ধরে ঝিরঝিরে বৃষ্টির জন্য রাস্তায় জল জমে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে হাঁটা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে পথচারীদের। সোমবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টির দরুন জনজীবন বিপর্যস্ত। এদিকে বৃষ্টি হওয়াতে সকলের মাথায় ছাতা যেমন উঠেছে তেমনি তার পাশাপাশি গায়ে উঠেছে ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য গরম পোশাক। আবার কেউ কেউ বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য এই গরম পোশাকের উপরেও রেইনকোট পড়েছেন।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরে এই দিন দেখা গেল এই দৃশ্য। সকাল থেকেই বাসস্ট্যান্ডে বাস গুলো সারি বদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল, যাত্রী কম থাকায় টোটো, অটো ও বাস মালিকরা লাভের মুখ কম দেখছেন বলে জানান।পাশাপাশি এদিন বিভিন্ন দোকান দোকানপাটও বন্ধ ছিল। স্কুল, কলেজ ও সরকারি চাকুরিজীবীরা বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করলেও বৃষ্টির কারনে বাস কম থাকায় প্রবল ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে বাদুড় ঝোলা হয়ে প্রায় ভিজতে ভিজতে তাদের কর্মস্থলে পৌঁছান। এ বিষয়ে গঙ্গারামপুরের এক স্কুল শিক্ষক নারায়ন সরকার বললেন, গত দুদিন আগে শীত পড়লেও গতকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়াতে আরো বেশিভাবে শীতের শুরু হল, তার সাথেই বিরক্তিকর নিম্নচাপের বৃষ্টি। যার জেরে সত্যি আমরা ভীষণ ভাবে বিপর্যস্ত ও খুব অসুবিধার মধ্যে পড়েছি। জানিনা কয়দিন এরকম থাকবে, তবে এই বৃষ্টির জন্য শীতের আভাস বইছে তা বলাই বাহুল্য।
বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা আবহাওয়া শীতের জানান দিচ্ছে অন্যদিকে গতকাল থেকে লাগাতার চলে আসা নিম্নচাপ বৃষ্টির জেরে চাষের জমি সহ শাকসবজির ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান জেলার একাংশ কৃষকরা। তারা জানান শীতের যে ফলন গুলো অর্থাৎ সর্ষেফুল থেকে শুরু করে ধান গম এই বৃষ্টির জেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে যার জেরে এবার তারা খুব একটা লাভবান হবেন না বলেই আশংঙ্কা করছেন। কৃষকরা তাদের বক্তব্যে বললেন, বৃষ্টি হওয়াতে জল চাষের জমিতে জমে উঠছে যার ফলে এই শীতের সময় এ জলে ধান গম ও অন্যান্য শাকসবজি পঁচতে শুরু করবে। যার জন্য আমরা ক্ষতির মুখে পড়বো, জানি না প্রকৃতির এই লীলা কবে বন্ধ হবে। পাশাপাশি শীতের দিনে যেভাবে বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীত দোরগোড়ায়।
তার সাথেই শীতকে ও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে অনেকেই স্কুল, অফিস, কলেজ, ব্যবসাপত্র বন্ধ করে মজে উঠেছে পিকনিক এর আমেজে। এই পিকনিকের মেনুও বেশ লোভনীয় ও সুস্বাদু, খিচুড়ি, পাপড় ভাজা, বেগুনি, চাটনি, মিষ্টি সহ কচি পাঁঠার মাংস। রসিক বাঙালি বৃষ্টি উপেক্ষা করে পিকনিক করেছেন বেশ জমিয়েই। তবে কিছু কিছু মানুষের দাবী যে যাই বলুক না কেন বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা যে পড়ছে তা বলাই বাহুল্য একটু অসুবিধা হলেও এই পরিবেশটাই কিন্তু বেশ মজার লাগছে। তবে হাওয়া অফিস কি বলছে তা শুধু জানার বাকি আমরা বুঝতে পারছি এই বৃষ্টি শেষ হলে জাঁকিয়ে শীত পড়বে সারা রাজ্য সহ আমাদের জেলাতেও আর আমরাও মজে উঠবো পিকনিকে। তাই আপাতত বৃষ্টিতে বিরক্তিকর জনজীবন যেভাবে বিপর্যস্ত তাতে অনেকে ঘরে বসেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছে কবে এই বৃষ্টি থামবে তা জানার অপেক্ষায়।
রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজে কাকভেজা হয়ে অনেকেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন তাদের কর্মস্থল এর উদ্দেশে। দোকানপাটও এদিন সকাল সকাল বন্ধ হয়ে যায় গঙ্গারামপুর এলাকায়। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ব্যস্ততম শহর এই গঙ্গারামপুরে প্রতিদিন যে পরিমাণে মানুষের ভিড় ও যানজট সৃষ্টি হয় তা মঙ্গলবার সকাল থেকেই চিত্রটা পাল্টে গেছে। সকাল থেকেই বৃষ্টির জেরে দোকানপাট বন্ধ ছিল যাত্রীরা অনেকে বাড়িমুখো হয়েছেন আর অনেকেই বাড়িতে বসে গরম খিচুড়ি খাওয়াতে ব্যস্ত, তবে এই টিপ টিপ বৃষ্টি সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়ায় ও শীতের আবহাওয়ায় যে যাই বলুক না কেন সব থেকে বেশি আনন্দে মজেছেন মদপিপাসুরা। এদিন সকাল থেকেই শহরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান গুলিতে ভিড় ছিল দেখার মতো। অন্যদিকে পৌর এলাকা ও বিভিন্ন এলাকার ড্রেনগুলি সংস্কার না হওয়ার দরুন জল জমে উঠেছে। ড্রেনের নোংরা জল রাস্তায় উঠে আসছে বলে অনেকে অসুবিধায় পড়েছেন যাতায়াতে। পাশাপাশি গ্রামের রাস্তা গুলো বৃষ্টি হওয়ার যে বেহাল হয়ে উঠেছে তাতে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এত কিছু সমস্যা হলেও কারো কোন বিন্দুমাত্র অভিযোগ নেই, কারণ সবাই বৃষ্টির সাথে শীতকে যে স্বাগত জানিয়েছেন তা তাদের পিকনিক করার আমেজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।