বড়দিন উপলক্ষে সেজে উঠছে গঙ্গারামপুর মিশন চার্চ
HnExpress ২৫শে ডিসেম্বর, পল মৈত্র, দক্ষিন দিনাজপুর ঃ পবিত্র বাইবেল শাস্ত্রমতে মনে করা হয় ডিসেম্বর মাসের কনকনে শীতের সময় প্রভু যীশুর জন্ম হয় বেথলেহেমের এক সরাইখানার গোয়ালঘরের যাবপাত্রে, আর সেই পবিত্র দিনটিকে বড়দিন বলা হয়। আর সেই বড়দিন উপলক্ষে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর চার্চ সেজে উঠছে আলোয় আলোয়।
তবে সাধারণত ২৫ ডিসেম্বরকেই খ্রিষ্ট বিশ্বাসীরা মনে করেন তাদের সবচেয়ে বড় উত্সবের নাম ‘খ্রিস্টমাস’, বাংলায় যাকে বলা হয় ‘বড়দিন’। যিশু খ্রিস্টের জন্মোত্সবকে কেন্দ্র করেই এই উত্সব পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশেই প্রতিবছর মহাসমারোহের সাথে এই বড়দিন পালিত হয় সারা ডিসেম্বর মাস ধরে।
তবে রাশিয়া, জর্জিয়া, মিশর, আর্মেনিয়া, ইউক্রেন ও সার্বিয়ার মতো বেশ কয়েকটি ইস্টার্ন ন্যাশানাল চার্চ প্রতিবছর বড়দিন পালন করে থাকেন ৭ই জানুয়ারি তারিখে। যদিও এই বড়দিন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও ২৫শে ডিসেম্বরে দক্ষিন দিনাজপুর জেলার গির্জাগুলো সেজে উঠেছে উত্সবের রঙে।
বেশ কয়েকটি গির্জা ঘুরে দেখা গেছে, গির্জার প্রতিটি অংশে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। লাল, নীল ও সবুজ এলইডি লাইটে ঝলমলে হয়ে উঠেছে গির্জাগুলো। তেমনি গঙ্গারামপুর শিববাড়ি মিশন চার্চ ও এলাকার বাড়িগুলোইও সেজে উঠেছে আলোর রোশনাইয়ে। চার্চের ফাদার জানান, ‘বড়দিন উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি তিন-চার সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়।
আমাদের মূলত দু’ধরনের প্রস্তুতি থাকে— একটি আধ্যাত্মিক ও অন্যটি বাহ্যিক। আমরা আধ্যাত্মিকটিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তবে বাহ্যিকটাও যথাযথ গুরুত্ব পায়। সেই সঙ্গে ২৫ ডিসেম্বর প্রার্থনা গির্জাতেই হয়, আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো পরিবারিক ও সামাজিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়।’ ”বড়দিন উপলক্ষে আমরা আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকি।
আমরা এদিন প্রার্থনা করে থাকি মন্দকে দূর করে মুক্তিদাতা ও পাপ ক্ষমাকারী প্রভু যীশু খ্রীস্টকে হৃদয় থেকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। এ অনুষ্ঠান সকল ধর্মাবলম্বীদের জন্যই উন্মুক্ত থাকে। আর বাচ্চাদের জন্যও বিশেষ কিছু ব্যবস্থা থাকে। সেই আনন্দে উত্সব, বিচিত্র অনুষ্ঠানও হয়।’
‘২৫ ডিসেম্বর আমাদের এখানে বাংলায় এবং ইংরেজিতে আলাদা আলাদা ভাবে প্রার্থনা করা হবে। ইংরেজিতে প্রার্থনা শুরু হয় সকাল ৯টায় এবং বাংলায় শুরু হয় সকাল ১১টায়। প্রার্থনা শেষে পবিত্র বাইবেল থেকে আলোচনা করা হয়। আমরা দেশের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করি। শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করি। আমাদের এখানকার অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত।
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোতে রয়েছে বড়দিনের বিশেষ আয়োজন। সেগুলোইও সবার জন্য উন্মুক্ত। অন্যদিকে, গঙ্গারামপু শহর জুড়ে ছোট বড় দোকান গুলিতে কেক বিক্রি বেড়েছে, কেক বিক্রি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন দোকানদারেরা। তাছাড়াও বাচ্চাদের জন্য সান্টাকল্জের জামা বিক্রি হচ্ছে চরম মাত্রায়।
মানে সব মিলিয়ে ২৫ ডিসেম্বর এখন শুধু খ্রিস্ট বিশ্বাসীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, সকল ধর্মের মানুষেরাই চার্চে গিয়ে শ্রদ্ধার সাথে প্রার্থনা করে কেক কেটে এই দিনটি পালন করেন। যদিও কেক টা এখানে নিতান্তই গৌণ বিষয়, এখানে যেটা আসল সেটা হলো ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, ভয়, শ্রদ্ধা ও তাঁর পবিত্র বাক্যানুযায়ী আজ্ঞাবহ হয়ে জীবনযাপন করা এবং প্রার্থনার মধ্যে থাকা।