পোস্তায় অভিযুক্তের গায়ে আঁচড়টিও লাগেনি

0

HnExpress সম্রাট গুপ্ত, কলকাতা : মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের নেপথ্যে রাজ্যের শাসকদলের দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। এর স্বপক্ষে নির্দিষ্ট যুক্তিও দেখিয়েছেন বিজেপি-সিপিএম নেতৃবৃন্দ। প্রায় একই ভাবে বিবেকানন্দ উড়ালপুল বিপর্যয়ের ঘটনাতেও জড়িয়েছিল এক বিশেষ শাসকনেতার নাম। প্রায় আড়াই বছর আগেকার ওই দুর্ঘটনার পর এ নিয়ে তুমুল হইচইও হয়। যদিও লোকে এখন প্রায় ভুলতে বসেছেন সেই কাহিনী।
পোস্তার স্থানীয় তৃণমূলকর্মী সঞ্জয় বক্সির সম্পর্কিত ভাইপো রজত বক্সি। এলাকায় ডাকাবুকো কাকা-ভাইপো হিসাবে ওঁদের বিশেষ পরিচিতি আছে। উড়ালপুল বিপর্যয়ের পর রজতের নাম উঠে এসেছিল। টেন্ডার খতিয়ে প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্মাতা সংস্থা আইভিআরসিএল-কে। সূত্রের খবর, তাদের বাধ্য হয়ে নির্মাণ সামগ্রি কিনতে হয়েছিল রজতের কাছ থেকে।

নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সে সময়ে কয়েকদিন অফিস বন্ধ করে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কলকাতা পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দেবাশিস বড়াল জানিয়েছিলেন, রজতের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। সূত্রের খবর, ঘটনার তদন্তে পুলিশ একাধিকবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করে।

তবে, সে বছর ২৯ জুন পুলিশ চার্জশিট জমা দিলেও তাতে নাম ছিল না রজতের। ওই দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে জমা দেওয়া ২৬০০ পাতার চার্জশিটে উড়ালপুল তৈরির বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা আইভিআরসিএলের ১০ কর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই দিনই উড়ালপুল নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত কেএমডিএ’র দুই ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

কেন চার্জশিটে রজতের নাম রাখা হয়নি? তদন্তকারীদের দাবি, রজতের বিরুদ্ধে আইভিআরসিএল -কে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করার অভিযোগ উঠলেও সেরকম কোনও প্রমাণ নাকি মেলেনি। অন্যদিকে রজত জানান, ‘‘শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই আমার নামে অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করে দেখে আমার কোনও ভূমিকা পায়নি বলেই চার্জশিটে আমার নাম নেই।’’

চার্জশিটে আইভিআরসিএলের ১০ কর্তার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন এবং সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়। নিষ্কৃতি পান রজত বক্সি। তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া স্মিতা দাপুটে তৃণমূল নেত্রী।

এবার বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রীতিমত সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের বিশেষ কাউকে মাঝেরহাট সেতু মেরামতির লোভনীয় টেন্ডার দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। এর নেপথ্যের কিছু নথিও তিনি দাখিল করেছেন বক্তব্যের সমর্থনে। শাসক দলের দূর্নীতির অভিযোগ এনেছেন বিধানসভায় সিপিএমের পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তাঁরা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই সব অভিযোগকে নস্যাৎ করে দিতে চেয়েছেন।

অভিজ্ঞরা জানেন, সময় হলেই থেমে যাবে এই চাপান-উতোর। অন্য ঘটনা জায়গা করে নেবে মিডিয়াতেও। পোস্তার মতই ইতিহাস হয়ে যাবে মাঝেরহাট নিয়ে তোলা দূর্নিতির অভিযোগ।

Leave a Reply

%d bloggers like this: