পুরনো কলকাতার স্মৃতি নিয়ে এক অনন্য প্রদর্শনী

0

HnExpress সম্রাট গুপ্ত, কলকাতা ঃ চিকিৎসক গঙ্গাপ্রসাদ সেন সই করে একটি গুরুত্বপূর্ণ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দাখিল করেছিলেন। তারিখটা ছিল ১৮৭২-এর ১২ ফেব্রুয়ারি। কেমন ছিল সেই সার্টিফিকেটের বয়ান? বা, কেমন ছিল ১৮৭১-এ হ্যান্ডমেড পেপারে লেখা বাংলা চিঠি, খাজনার দলিল?

হারিয়ে যাওয়া কলকাতার এ রকম হরেক সামগ্রি নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক অনন্য প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন রাজ্যপাল কেশরী নারায়ণ ত্রিপাঠি। অনুষ্ঠানের বিষয়: ‘কালি, কলম, মন’। মুখ্য উপদেষ্টা প্রসাদরঞ্জন রায়।

অনুষ্ঠানে রয়েছে প্রেমেন্দ্র মিত্র ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের হাতে লেখা পান্ডুলিপি। কী রকম ছিল ওই সব হস্তাক্ষর? আজ কম্পিউটারের যুগে যখন হাতের লেখা হারিয়ে যেতে বসেছে, এ সব প্রশ্ন কিন্তু অনেকের মনেই ওঠে!

শেক্সপিয়র সরণির অরবিন্দ আশ্রমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল নরনারায়ণ গুপ্ত, প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ শঙ্কর রায়চৌধুরী, প্রাক্তন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ মতিলালের মত বহু প্রবীন কলকাতাপ্রেমী।

প্রেমেন্দ্র মিত্র, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে কুমুদ রঞ্জন মল্লিক, রমেশ চন্দ্র মজুমদার প্রমুখের বইয়ের পান্ডুলিপি। সংগ্রাহক উজ্জ্বল সর্দারের সৌজন্যে এ সব ছাড়াও আমরা কাচের প্রকোষ্ঠে পেলাম বনফুলের নাটক ‘আসন্ন‘, আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প ‘মৃদুভাষিণী’ প্রভৃতির পান্ডুলিপি। ১৮৯৪-এর ৭ ফেব্রুয়ারি মহারাজ মণীন্দ্র চন্দ্র নন্দীর রাজসনদের সিল-সহ চিঠি, ‘মানিকচাঁদ অ্যান্ড আদার্স‘-এর চুক্তিপত্রের স্ক্রল প্রভৃতি।

সংগ্রাহক ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী, গৌতম বসুমল্লিক, চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যয় প্রমুখের সৌজন্যে প্রদর্শনীতে রাখা বেশ কিছু সামগ্রি দেখার সুযোগ মেলে। এর মধ্যে নজর কাড়ে গৌতমবাবুর সংগৃহীত শোকগাথা, বিয়ের ছড়া, বাংলা ১৩০৯, ১৩২৪ ও ১৩৪৫ সালের বিয়ের আমন্ত্রণপত্র, ১৩২১ ও ১৩২২-এর শারদীয় আমন্ত্রণপত্র প্রভৃতি।

উদ্বোধনী ভাষণে রাজ্যপাল প্রদর্শনীতে দেখানো শহিদ ক্ষুদিরাম ও ঋষি অরবিন্দর বিচারের এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আইনি লড়াইয়ের নথির উল্লেখ করে সন্তোষ জানান। অরবিন্দ আশ্রমকে এ রকম প্রদর্শনী করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আবারও এ রকম প্রদর্শনী করার আবেদন জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে তিনি পাঁচ জন প্রবীণ সংগ্রাহককে এ দিন সম্মান জানান । এঁরা হলেন সুশীল চট্টোপাধ্যায়, গৌতম মিত্র, পরিমল রায়, সুনীল বিশ্বাস ও অমিত রায়।

এ দিন প্রকাশিত হয় চন্দ্রনাথ ও মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বই ‘তিনটে, ছটা, নটায়’ (কথোপকথন)। জীবন থেকে যা হারিয়ে গিয়েছে— চিলেকোঠা, ফেরিওলার ডাক, রোয়াক, যৌথ পরিবার, বেতার জগৎ, এ সব নিয়েই এই বই। প্রদর্শনী চলবে রবিবার পর্যন্ত, রোজ ৩-৮টা।

Leave a Reply

%d bloggers like this: