December 11, 2024

নেতাজীর শ্রদ্ধার্ঘ হিসাবে নতুন নাম হোক লালকেল্লা ও আন্দামানের, দাবি সভায়

0
20181027 174302.jpg
Advertisements

HnExpress অশোক সেনগুপ্ত, কলকাতা : আন্দামান ও নিকোবরের নাম নেতাজীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শহিদ ও স্বরাজ রাখার দাবি উঠল কলকাতার এক সভায়। এই সঙ্গে লালকেল্লাকেও নেতাজীর নামাঙ্কিত করার দাবি পেশ হল।

নেতাজী সুভাষচন্দ্র কোন পরিস্থিতিতে ১৯৪৩-এ আন্দামানে পতাকা উত্তোলন করেন, তা শনিবার কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে ব্যাখ্যা করেন নেতাজী পরিবারের সদস্য তথা বিজেপি নেতা চন্দ্রকুমার বসু। চন্দ্রবাবু এ দিন আহ্বাণ করেন, “ফের আন্দামান ও নিকোবরের নাম সরকারিভাবে ‘শহিদ‘ ও ‘স্বরাজ‘ রাখা হোক। আসুন আজকের এই সভায় তার দাবি তুলি।“

আন্দামানের যেখান থেকে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু অবিভক্ত স্বাধীন ভারতের পতাকা তুলেছিলেন, সেই একই তারিখে সেখানে স্বাধীন ভারতের পতাকা তুলবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘সুভাষ সংস্কৃতি পরিষদ’ আহুত এই সভায় এ দিন চন্দ্রবাবু বলেন, গত ২১ অক্টোবর লালকেল্লায় আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫-তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি সংগ্রহশালার শিলান্যাস করেছেন। আগামী ২৩ জানুয়ারি এটি উদ্বোধন করার কথা।

লালকেল্লার নাম সুভাষচন্দ্রের স্মৃতিতে চিহ্ণিত করলে ওই বীর সেনানীর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে। এই দাবি আমরাই যে প্রথম করলাম, তা নয়। শ্যমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ই এই দাবি রেখেছিলেন।

চন্দ্রবাবু বলেন, জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতার কাছেও নেতাজীর অনুপ্রেরণা ছিল অসীম। জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাদিবস এই ২১ ফেব্রুয়ারিতেই। নেতাজী এবং স্বামীজীকে সামনে রেখে নতুন ভারত তৈরিতে অগ্রণী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এর চেয়ে বড় আশাবাদের কথা আর কীই বা হতে পারে।

গত ৭১ বছর লোকে জেনে এসেছে জওহরলাল নেহরু ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ‘ওপেন প্লাটফর্ম ফর নেতাজী’ সংগঠনের কর্তা চন্দ্র কুমার বসু বলেন, সুভাষচন্দ্রর দাবি ছিল পূর্ণ স্বরাজ। তার ভিত্তিতেই ১৯৪৩-এর ২১ অক্টোবর অখন্ড ভারতের প্রথম স্বাধীন সরকার তৈরি করেন সিঙ্গাপুরে। এই হিসাবে তিনিই ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। সুখের কথা, এই প্রথম ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী সরকারিভাবে তার স্বীকৃতি দিলেন।

চন্দ্রবাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী আশ্বাস দিয়েছেন, কেবল নেতাজী সুভাষচন্দ্র নন, ১৮৫৭ সাল থেকে স্বাদীনতা সংগ্রামের ইতিহাস থেকে যাঁদের নাম বাদ রাখা হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। সেই প্রকৃত ইতিহাস পেশ করা হবে পাঠ্যপুস্তকে। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভারতের স্বাধীনতার প্রকৃত চিত্র পান। এর জন্য আমাদের পাঁচ বছর সময় দিতে হবে। শুরু হয়েছে এর প্রস্তুতি।

ভারতের স্বাধীনতা ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্ট আসেনি। চন্দ্রবাবু এ কথা জানিয়ে বলেন, এর ঢের আগে ১৯৪৪-এর ১৪ এপ্রিল নেতাজীর নির্দেশে কর্ণেল সৌকত আলি মালিক ‘বাহাদুর ব্রিগেড‘ নিয়ে মৈরাংয়ে পতাকা তোলেন। সুভাষচন্দ্রের স্বপ্ন ছিল লালকেল্লায় পতাকা তোলা। সেটা সম্ভব হয়নি কংগ্রেসের বিশ্বাসঘাতকতায়। সুখের কথা, প্রধানমন্ত্রী নেতাজীর সেই স্বপ্ন সফল হল নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে। এ সবও ইতিহাসে লিখতে হবে।

১৯৪৭ সালে ভারত পূর্ণ স্বরাজ পায়নি। পেয়েছিল ‘ডোমিনিয়ন‘ মর্যাদা। এই তথ্য পেশ করে চন্দ্রবাবু বলেন, নেহরু ছিলেন ওই ডোমিনিয়ন ও বিভক্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে ভারতের পতাকা তোলেননি। উল্টোপথে হেঁটে লিয়াকত আলি জিন্না ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা তুলতে পেরেছিলেন।

এ দিন অনুষ্ঠানে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের অবিস্মরণীয় কীর্তি সম্পর্কে বলেন নেতাজী গবেষিকা ও ‘নেতাজী ভাবনা মঞ্চ‘-র কর্ণধার পূরবী রায়, সুভাষ সংস্কৃতি পরিষদের কর্ণধার পিনাকি ভাদুড়ি, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের অন্যতম বংশধর প্রসাদরঞ্জন দাস প্রমুখ। তাঁরা নেতাজীর কীর্তিকে কেন্দ্রের স্বীকৃতিদানকে অতি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় বলে মন্তব্য করেন।

এ দিন অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে নেতাজী সুভাষচন্দ্র, রাসবিহারি বসু, জ্যোতিষ জোয়ারদার, সুরেশ চন্দ্র দে প্রমুখ সংগ্রামী এবং সিঙ্গাপুরে নেতাজীর তৈরি আইএনএ সৌধর বাঁধানো প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনুষ্ঠান শেষে ‘কদম কদম বঢ়ায়ে যা’ সহ নেতাজীর পছন্দের কিছু গান পরিবেশন করে ‘দেশের মাটি’ গোষ্ঠী। তাদের অন্য পরিবেশনাগুলির মধ্যে ছিল ‘মুক্তির মন্দিরে সোপানতলে‘, ’ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ প্রভৃতি। সমাপ্তি সঙ্গীত হিসাবে পরিবেশিত হয় ‘জনগণমন অধিনায়ক’।

Advertisements

Leave a Reply