নেতাজির এক অন্য রকম জন্মদিন, তাঁর স্মৃতির চপের দোকানে

HnExpress সম্রাট গুপ্ত, কলকাতা, ২৩ জানুয়ারি : এই একটা দিনের জন্য অপেক্ষা করেন ওঁরা। ওঁরা মানে সাউদের বাবা-ছেলে এবং অসংখ্য তেলেভাজাপ্রেমীরা। সাউদের তৃপ্তি খাইয়ে, আর বাকিদের রসনার তৃপ্তি। প্রতি বছরের মত এদিনওসকাল থেকে ভিড় ছিল ১৫৮ বিধান সরনিতে, লোকমুখে যা ‘নেতাজির তেলে ভাজার দোকান’।
বুধবার সকাল থেকেই ভিড় বিধানসরণীর লক্ষ্মী নারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স নামে বিখ্যাত তেলেভাজার দোকানে। বয়স বাড়লেও জনপ্রিয়তার ভাঁড়ারে কিন্তু এতটুকু ভাঁটা পড়েনি। এটির পরিচয় ‘নেতাজির তেলে ভাজার দোকান’ হিসাবে। ১০১ বছর অতিক্রমও করল দোকানটি। প্রতিষ্ঠাতা খেদু গুপ্তর পর হাল ধরেছিলেন লক্ষীনারায়ণ। এখন কর্তৃত্ব তাঁর পুত্র কেষ্টকুমার গুপ্ত এবং ছেলে সুদেষ্ণুর হাতে।
স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়ার সময় এই দোকানটি থেকেই তেলেভাজা খেয়েছিলেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৪২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষে ২৩ জানু্য়ারি বিনামূল্যে সবাইকে চপ খাওয়ানো হয় সেই জন্যই। সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাধারণ মানুষের কাছে এখনও আগের মতোই জনপ্রিয় তা।
‘নেতাজির দোকান’ থেকে চপ খেতে সকাল থেকেই রয়েছে ভিড়। সাড়ে আটটায় শুরু হয়েছে চপ বিলি। চলবে আড়াইটে পর্যন্ত। মালিক কেষ্টকুমার গুপ্ত এবং ছেলে সুদেষ্ণু ব্যস্ত ভিড় সামলাতে। আজ কেউ খদ্দের নয়, প্রত্যেকেই অতিথি। প্রত্যেককে চারটি করে চপ দেওয়া হচ্ছে। ছোটদের দু’টি করে।
ওই ভিড়েই ছিলেন হাতিবাগানের অর্ক দত্ত। চপ পেয়ে খুশি। একগুচ্ছ ছবি তুললেন। বললেন, “এই গোটা এলাকাটায় অনেক ঐতিহ্যের স্মারক। তার মাঝে নেতাজির স্মৃতিতে এ রকম একটা উদ্যোগ, সত্যি প্রশংসনীয়।“ ব্রাউন পেপারের মোড়কে ভরে দেওয়া হচ্ছে চপ। দোকানের কেউ ভাজছেন, কেউ সেই ভাজা চপ তুলে পাশের ট্রে-তে রাখছেন, কেউ আবার সেই চপ ঠোঙায় ভরে হাসিমুখে তুলে দিচ্ছেন সমবেতদের হাতে। মাইকে বাজছে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, পাশে ব্যান্ডপার্টি।
১৯১৮ সালে ছোট্ট একটি ঘর থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল। দোকানের মালিক ছিলেন খেদু সাউ। তিনিই দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি নেই। কিন্তু তাঁর নাতিরা মিলেই আপাতত দোকানটি চালাচ্ছেন। আগামী দিনেও এই পরম্পরা যে চলবে তা জানিয়েছেন, দোকানেরই এক মালিক।
সকাল থেকেই দোকান সংলগ্ন ক্লাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলেছে। ১৯৫৮ সালে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রত্যেক বছর নেতাজির জন্মদিনে এখানে অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এবারেও তাঁর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ওই এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থাকছেন রাজ্যের মন্ত্রী ডঃ শশী পাঁজা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক সুদীপ্ত রায়, ডেপুটি মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ, তারকনাথ চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণপ্রসাদ সিং। এর পাশাপাশি সন্ধেবেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নেতাজির জন্মদিনের জন্য ওখানে আগামী চারদিন আরও নানা অনুষ্ঠান হবে’।