জলাশয় নিয়ে বিরোধ চরমে আবাসন সোসাইটি ও পুরসভার

0

HnExpress সম্রাট গুপ্ত, কলকাতা : দক্ষিণ কলকাতা বা শহরতলীর বিভিন্ন সমবায় সোসাইটির জলাশয় নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিরোধ কলকাতা পুরসভা ও সোসাইটি কর্তৃপক্ষগুলির মধ্যে। এ নিয়ে দু‘পক্ষের মধ্যে আইনি লড়াই শুরুর আশঙ্কাও রয়েছে।

এখন যেখানে ইএম বাইপাস, কয়েক দশক আগে সেই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছিল মেছো ভেরি এবং চাষের ক্ষেত। ভূমির উর্দ্ধসীমার আইনবলে সরকার জমিদারদেরদের মালিকানার ওই জমি ‘খাস‘ হিসাবে চিহ্ণিত করে। বেশ কিছু আবাসন সোসাইটিকে দীর্ঘমেয়াদি লিজে হস্তান্তর করা হয় সেগুলি। তৈরি হয় সার্ভে পার্ক, পঞ্চসায়র, মেট্রোপলিটন প্রভৃতি নামের আবাসন সোসাইটি।

বিভিন্ন সোসাইটিতে বাড়িঘর ছাড়াও রয়েছে বেশ বড় মাপের অনেক জলাশয়। মাছ চাষের জন্য এগুলি লিজ দিয়ে উপার্জন করে সোসাইটি-কর্তৃপক্ষ। বিরোধের সূত্রপাত এই সব জলাশয় পুর-অধিগ্রহণের চেষ্টা নিয়ে। এ নিয়ে নানা স্তরে বৈঠক হয়েছে। অধিগ্রহণে আপত্তি জানিয়েছে সোসাইটিগুলি। সম্প্রতি এ রকম বেশ কিছু জলাশয়ের ধারে বড় বিজ্ঞপ্তি লাগিয়ে দিয়েছে পুরসভা। তাতে লেখা, পরিচ্ছন্নতা না থাকলে এক মাসের মধ্যে আইন মোতাবেক জলাশয় অধিগ্রহণ করা হবে। কবে থেকে এক মাস, তার উল্লেখ নেই এই নির্দেশিকায়।

মূল বাইপাসের একাংশ এবং এর সঙ্গে সন্তোষপুরের সংযোগকারী রাস্তা তৈরি হয়েছিল
সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির (সংক্ষেপে সার্ভে পার্ক) মধ্যে দিয়ে। বিস্তীর্ণ এই অঞ্চল কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। এর কাউন্সিলার প্রাক্তন ‘মিস ক্যালকাটা‘ অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় এলাকার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী। তিনি এবং শাসক কিছু নেতা চেয়েছিলেন জলাশয়গুলির সৌন্দর্যায়ন করে ’জল ভরো, জল ধরো’ প্রকল্পের কিছু কাজ করতে।

কেবল সার্ভে পার্কেই আছে চারটি জলাশয়। এর মধ্যে অন্যতম ‘নীল পুকুরের‘ দৈর্ঘ্য ৫০০ ফুট, প্রস্থ ২০০ ফুট। প্রায় ১ লক্ষ বর্গফুটের এই জলাশয়ের পাশে থাকেন বন্ধন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর ঘোষ, ‘টেকনো ইন্ডিয়া‘-র প্রধান কর্তা গৌতম রায়চৌধুরী-সহ মান্যগন্য কিছু ব্যক্তি। পুরসভার অভিযোগ, জলাশয়গুলি এবং এর পাড়ে নানা স্থানে বর্জ্য জমছে। এ থেকে একদিকে দূষণ ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে বাড়ছে ডেঙ্গির মত রোগ। ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ করতেই জলাশয়গুলি অধিগ্রহণ দরকার।

অন্যদিকে, সার্ভে পার্ক সোসাইটির সম্পাদক সাম্যসাধন রায়চৌধুরীর বক্তব্য, এখানকার আবাসিকদের ৬৭৭ জন লিজগ্রহিতা। তাঁদের এখন সোসাইটিকে বছরে ৩৯৯ টাকা করে চাঁদা দেওয়ার কথা। কিন্তু অনেকে সেই টাকা দেন না। আবার, সরকার চুক্তি অনুযায়ী সোসাইটির কাছ থেকে বছরে ৩ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা পায়। এই অর্থের সংস্থান হয় জলাশয়ের লিজের টাকায়। তিন বছর অন্তর প্রায় সাড়ে ছ‘লক্ষ টাকা এ ভাবে আয় করে সোসাইটি।

পুরসভার দাবি, তারাই সার্ভে পার্ক পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করে। আবার সাম্যবাবুর দাবি, বাসিন্দাদের কাছ থেকে কর নিচ্ছে ওরা। পুর-সাফাই তো করতেই হবে। এর সঙ্গে জলাশয় নেওয়ার সম্পর্ক কী? তাঁর অভিযোগ, পুরসভা জলাশয় অধিগ্রহণের জন্য অযথা জোর করছে। এর কোনও আইনি ভিত্তি নেই। সোসাইটির সম্পত্তির ওপর এভাবে নজর দিলে তার আইনি রক্ষাকবচ আছে। তাঁর প্রশ্ন, পুর-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলিই বা কতটা পরিচ্ছন্ন?

Leave a Reply

%d bloggers like this: