জমছে “পকসো” মামলার পাহাড়, নেই বিচারকের দেখা
HnExpress ১১ই মার্চ, অভিজিৎ হাজরা, উলুবেড়িয়া : উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে জমছে “পকসো” (প্রোটেকশন অফ চিল্ডেন ফ্রম সেস্ক্যুয়াল অফেন্সস) মামলার পাহাড়। অথচ দেখা নেই বিচারকের। হ্যাঁ, এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিচারক না থাকায়। ২০১৬ সালে রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে, নাবালিকাদের ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য “পকসো” বিচারক নিয়োগ করা হয়েছিল।
শুধুমাত্র “পকসো” মামলারই বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয় এই বিচারকদের। রাজ্যের অন্যান্য আদালতের পাশাপাশি উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতেও “পকসো” বিচারক নিয়োগ করা হয়। গত ২০১৯ সালের জুন মাসে উলুবেড়িয়া আদালতের “পকসো”-র বিচারক অন্যত্র বদলী হয়ে যান। তারপর সেই পদে পূর্ণ সময়ের জন্য আর বিচারক নিয়োগ করা হয় নি।যে কারণেই “পকসো” মামলার পাহাড় জমেছে। শুনানিও বন্ধ আছে।
২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া উলুবেড়িয়া কোর্টে “পকসো” আদালতে এখনও পর্যন্ত নিষ্পত্তি না হওয়া মামলার সংখ্যা হলো ৩১৭ টি। এর মধ্যে ২২২ টি মামলার চূড়ান্ত শুনানি হতে হতেও বন্ধ হয়ে গেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। এই পরিস্থিতি প্রসঙ্গে উলুবেড়িয়া আদালতের আইনজীবীরা বলেছেন, শুনানি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় পিছিয়ে গেছে মামলার নিষ্পত্তিও। এর কারণে নির্যাতিতরা যেমন বিচার পাচ্ছে না, তেমনি অপরদিকে বহু নির্দেশও আটকে গেছে।
উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের ক্রিমিনাল বার অ্যাসসিয়েশনের সম্পাদক পীযুষ গুহ জানালেন, “পকসো” আদালতের উদ্দেশ্যই হল দ্রুত ঘটনার বিচার করে তার নিষ্পত্তি করা
ও দোষীদের শাস্তি দেওয়া। যদিও উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে বর্তমানে তা সম্ভবপর হচ্ছে না। তিনি আরও জানালেন, উলুবেড়িয়া কোর্টে “পকসো” মামলার পরিস্থিতির কথা আমরা হাইকোর্টে জানিয়ে দ্রুত “পকসো” বিচারক নিয়োগ করার দাবি জানিয়েছি।
এছাড়াও আমরা রাজ্যের বিভিন্ন আদালতের আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলে জেনেছি, রাজ্যের কোন “পকসো” আদালতেই বিচারকের পদ এতদিন ধরে শূন্য নেই।’ উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের আরো একজন আইনজীবী বলেন, সম্প্রতি আইনজীবীদের নিয়ে কলকাতায় এক প্রশিক্ষণ শিবির হয়। সেই প্রশিক্ষণ শিবিরেও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারকদের উলুবেড়িয়া মহকুমা “পকসো” আদালতে “পকসো” মামলার বিচারের পরিস্থিতির কথা জানানো হয়।
হাওড়া জেলা আদালত সূত্রে বলা হচ্ছে যে, ইতিমধ্যেই উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে “পকসো” মামলার বিচার পরিস্থিতির কথা হাইকোর্টে জানানো হয়েছে। হাইকোর্ট সমস্ত বিষয়টা পর্যালোচনা করে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে পূর্ণ সময়ের জন্য “পকসো” বিচারক নিয়োগ করার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের অধীনে উলুবেড়িয়া, শ্যামপুর, বাগান, বাউরিয়া, আমতা, উদয়নারায়নপুর, জয়পুর এই সাতটি থানা আছে।
এই সাতটি থানা থেকে বছরে গড়ে ১২০ টি করে “পকসো” আইনের মামলা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ১১টি “পকসো” মামলা দায়ের হয়েছে উক্ত সাতটি থানায়। কিন্তু উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে “পকসো” বিচারক না থাকার কারণে নির্যাতিতারা সুবিচার পায়নি। এছাড়াও “পকসো” মামলায় যে সমস্ত বিচার চলতে চলতে বন্ধ হয়ে গেছে তা পরবর্তী সময়ে পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে বলে আইনজীবীরা মতপ্রকাশ করেছেন।
এক্ষেত্রে আইনজীবীদের অভিমত, এইসব মামলার মূল সাক্ষী যেহেতু নির্যাতিতাই স্বয়ং, সেক্ষেত্রে বিচার দেরিতে হলে নির্যাতিতা ঘটনার অনেক কথা ভুলে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় গড়বড় করতেই পারে। আবার বিচার দেরী হওয়ার সুযোগে দোষী ও তার ঘনিষ্ঠজনরা সাক্ষীদের ভয় দেখাতে, বা হুমকিও দিতে পারে। ফলস্বরূপ তাতে মামলারও ক্ষতি হতে পারে। এবং নির্যাতিতা সঠিক বিচার নাও পেতে পারে। গত ২০১৯ এর জুন মাসে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের “পকসো”মামলার বিচারক অন্যত্র বদলী হওয়ার পরে অবশ্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (২) কে সাময়িক ভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি শুধুমাত্র জামিনের আবেদনের শুনানি করেন। এছাড়া কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ নির্দেশে যদি কোন “পকসো” মামলার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই মামলার বিচার এই বিচারক করে থাকেন। আইনজীবীরা বললেন, যদিও সব নির্যাতিতা বা তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষে হাইকোর্টের দারস্থ হওয়া সম্ভব নয়। তাই তেমন শুনানি উলুবেড়িয়া মহকুমা “পকসো” আদালতে কম হয়।