জন্মদিনে শ্রদ্ধা ‘নেতাজীর গুরু’ চিত্তরঞ্জন দাশকে

0

HnExpress সম্রাট গুপ্ত, কলকাতা : দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের জন্মদিনে সোমবার তাঁকে নাগরিক মঞ্চের তরফে শ্রদ্ধা জানান হয়।

সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতবাসীর সেবা করার উদ্দেশ্যে বিলেতের চাকুরী ছেড়ে চলে আসেন মহাত্মা গান্ধীর কাছে। নাগরিক মঞ্চের তরফে এ কথা জানিয়ে সুভাষচন্দ্রের পরিবারের সদস্য চন্দ্র কুমার বসু বলেন, “গান্ধীজী সুভাষচন্দ্রর দেশপ্রেম দেখে মুগ্ধ হন এবং তাঁকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সাথে কাজ করতে পাঠালেন। চিত্তরঞ্জন দাশের মধ্যে সুভাষ তাঁর প্রকৃত গুরুর সন্ধান পেলেন।

চিত্তরঞ্জন দাশ বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার তেলিরবাগ নামক গ্রামে এক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ভবানীপুর লন্ডন মিশনারি স্কুলে তার শিক্ষা আরম্ভ হয়। ১৮৯০ সালে চিত্তরঞ্জন দাস প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বি.এ. পাস করেন। সেই সময় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ কংগ্রেসের মধ্যে স্বরাজ পার্টি বানিয়ে ছিলেন। আর সুভাষ বসু বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচার দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন বাংলায় ‘উগ্র জাতীয়তাবাদের’ প্রবক্তা দেশবন্ধু।

চিত্তরঞ্জন দাস (৫ নভেম্বর ১৮৭০ – ১৬ জুন ১৯২৫) পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিয়েছিলেন। এ কথা জানিয়ে তাঁর পরিবারের অন্যতম উত্তরসূরী তথা রাজ্যের পূর্ত দফতরের প্রাক্তন আধিকারিক প্রসাদ রঞ্জন দাস এ দিন বলেন, “আমার ধারণা ১৯২৫ সালে চিত্তরঞ্জন দাসের অকাল দেহান্ত না হলে ভারতের ইতিহাস হয়ত অন্যভাবে লেখা হত। তিনি নেতাজীর মত মহামানবকে রাজনৈতিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। “
এ দিন চিত্তরঞ্জন দাশকে শ্রদ্ধা জানাতে এসে গোষ্ঠ পাল সরনীতে মূর্তির বেষ্টনীর বাইরে নাগরিক মঞ্চের প্রতিনিধিদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। কারণ পূর্ত দফতর নিয়ন্ত্রণে থাকা জায়গাটিতে তালা মেরে মালি অন্য কোথাও গিয়েছিলেন। পুলিশের সহযোগিতায় নানা জায়গা খুঁজে মালিকে আনা হলে বেষ্টনীর তালা খোলা হয়।

সমবেতরা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ১৯২৪ সালে কলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র নির্বাচিত হন, তখন সুভাষচন্দ্র তাঁর অধীনে কর্মরত ছিলেন। এই থেকে তার রাজনীতিক জীবনের শুরু। দেশবন্ধুর মতাদর্শে সুভাষ তখন এক সেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন কিন্তু ইংরেজ সরকার সেই দলকে অবৈধ ঘোষনা করেন। এবং সুভাষকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯২৫ সালে তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। তাঁর অবস্থার অবনতি দেখে তাঁকে বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়। এরই মধ্য তাঁর গুরু চিত্তরঞ্জন দাসের মৃত্যু ঘটে। সুভাষ তখন সাময়িক ভাবে ভেঙ্গে পরেন।

১৯২৫ সালের ১৬ই জুন চিত্তরঞ্জন দাশ মৃত্যুবরণ করেন। উদার মতবাদ ও দেশের প্রতি দরদের কারণে তিনি হিন্দু মুসলমান সকলের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অর্জন করেন এবং তার এই উদার মতবাদের জন্য জনগণ তাকে দেশবন্ধু খেতাবে ভুষিত করেন।
তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকার্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সম্বন্ধে বলেন— “এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ।
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।”

একজন বাঙালি আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ। তিনি স্বরাজ্য পার্টি-র প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর সময়ের অন্যতম বৃহৎ অঙ্কের আয় অর্জনকারী উকিল হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর সম্পদ অকাতরে সাহায্যপ্রার্থীদের কাছে বিলিয়ে দিয়ে বাংলার ইতিহাসে দানবীর হিসাবে সুপরিচিত হয়ে আছেন।

এ দিন বেলা সাড়ে দশটায় রাজ্য সরকারের তরফে প্রবীন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় দেশবন্ধুর এই মূর্তির পাদদেশে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

Leave a Reply

%d bloggers like this: