December 11, 2024

একটু ঘুরু ঘুরু, চলুন কলকাতার উপকন্ঠেই দক্ষিণ ভারতের ছোঁয়া স্বামীনারায়ণ মন্দিরে

0
Logolicious 20190603 115045.jpg
Advertisements

HnExpress ভ্রমণের অলিন্দে, জয় গুহ ঃ যারা আক্ষেপ করেন যে কলকাতা আর তার আশেপাশে দক্ষিণ ভারতের মতো বিভিন্ন বিশাল মাপের আর সুন্দর কারুকার্য দিয়ে মোড়া কোনো মন্দির দেখতে পারেন না, তাদের আমি বলবো একবার ডায়মন্ড হারবার রোডের ওপর জোকা থেকে সামান্য এগিয়ে ভাসা বলে একটা জায়গায় স্বামীনারায়ণ মন্দির ঘুরে আসতে। বেহালা চৌরাস্তা থেকে আমতলা যাওয়ার পথে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে একদম হাইওয়ের ধারে বাঁদিকে দেখতে পাবেন এই বিশাল মন্দির।

ভ্রমণ, খাওয়াদাওয়া ও স্থাপত্যশিল্প ঃ প্রায় ২০০ একর জমির উপর তৈরি এই মন্দিরের অনেকগুলো অংশ আছে। প্রধানত মার্বেল, বেলেপাথর আর লালপাথর ব্যবহার করে এই অসাধারণ স্থাপত্যকীর্তি গড়ে তোলা হয়েছে। কথিত আছে যে, বহু বছর আগে স্বামীনারায়ণ দক্ষিণ ভারত থেকে এই রাস্তা দিয়ে গঙ্গা সাগর গিয়েছিলেন। যদিও এই মন্দির তৈরি করতে অনেকটা সময় লেগেছে। অবশেষে ২০১৪ সালে সর্বসাধারণের জন্যে এই মন্দিরের দ্বার খুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মন্দিরে প্রবেশ করার ফটক খোলা থাকে। এই মন্দির চত্বরে ঢুকতে কোনো প্রবেশ মূল্য লাগবে না। তবে ডানদিকে অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে গাড়ি পার্ক করার জায়গা।

মোটর সাইকেলের জন্যে ২০ টাকা আর গাড়ির জন্যে ৫০ টাকা লাগে। মন্দিরে ঢোকার আগে ডানপাশে রয়েছে একটা বিশালকায় ক্যান্টিন, সেখানে দক্ষিণ ভারতীয় খাবার থেকে উত্তর ভারতীয় সবরকম খাবারই পাবেন। এমনিতে দুপুরের মিল পাবেন দুরকম, একটা শুধুই পাঁচমিশালি তরকারি দিয়ে খিচুড়ি ভোগ সাথে একটু আচার, যার দাম মাত্র ৫০ টাকা থালি। এছাড়া পঞ্চব্যঞ্জন দিয়ে সাজানো পোলাওয়ের থালিও আছে, দাম পড়বে মাত্র ১৩০ টাকা। তবে যাই খান না কেন সবটাই নিরামিষ। ভীষণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন খাওয়ার জায়গাটা। একসাথে প্রায় পাঁচশো লোক বসে খেতে পারে এখানে।

এবার মন্দির চত্ত্বরে প্রবেশ করার পথে রয়েছে স্বামী নারায়ণ ট্রাস্টের অফিস। এখানে একটা কাফেটেরিয়াও আছে। পাশে আছে একটা মহিলা ও পুরুষদের জন্য বিরাট টয়লেটের ব্যবস্থা। পশ্চিমবঙ্গ বা উত্তর ভারতের বিভিন্ন মন্দির প্রাঙ্গনে যেটা কিনা ভাবাই যায়না।

প্রধান মন্দিরের চারদিকে জ্যামিতিক নকশার আকারে অনেকগুলো বাহু রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন মাপের প্রত্যেকটা বাহুই আসলে এক একটা প্রশস্ত রাস্তা। এই রাস্তা গুলোর চারদিকে বেলেপাথরের তৈরি কারুকার্য করা প্রচুর স্তম্ভ। প্রত্যেকটা উপরে পাথরের আচ্ছাদন আর বিভিন্ন মাপের সারি সারি চুড়ো। সূর্যের আলোয় সমস্ত মন্দিরটা যেন সোনার তৈরি মনে হয়। এই রাস্তাগুলোর মাঝে মাঝে রয়েছে কৃত্রিম জলাশয় আর তার মধ্যে খুব সুন্দর সুন্দর পাথরের বড়ো মাছ আর নানা রকম মূর্তি, ফোয়ারার ব্যবস্থাও রয়েছে। চারদিকে প্রচুর সবুজ বাগান আর ভীষণ রকম সুন্দর ফুলের গাছ।

মূল মন্দিরটা দোতলা, তবে এখানে ঢোকার আগে পায়ের জুতো খুলে রাখতে হবে, বেশ কয়েকটা জুতো রাখার কাউন্টারও আছে। সেখানে আপনি জুতো রেখে টোকেন নিয়ে নিন, এই ব্যবস্থাটাও সম্পূর্ণ ফ্রি। অনেকগুলো সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতে হবে। এখানে অনেক দেব দেবীর মূর্তি আছে, প্রত্যেকটা বিরাট মাপের মার্বেল পাথরের স্তম্ভের গায়ে বিভিন্ন ধরনের মূর্তি ও অন্যান্য খোদাইয়ের কাজও দেখার মতো। মাথার উপরে এক সুবিশাল ঝাড়বাতি, সম্পূর্ণটা ঘুরে ঘুরে দেখতে অনেকটাই সময় লাগবে। এখানে প্রচুর রক্ষীও মোতায়েন করা আছে।

দোতলা থেকে বেশ কয়েকটা সিঁড়ি নেমে গেছে নিচের দিকে, আসলে একতলায় সোজা ঢোকা যাবেনা। প্রথমে দোতলায় উঠে তারপর নিচে নেমে একতলায় ঢুকতে হবে, একটাই ঢোকার দরজা। অনেকটা গর্ভগৃহের মতো, ভীষণ রকম শান্ত পরিবেশ। মাঝখানে একটা কাঁচের ঘর, সেখানে সম্পূর্ণ সোনার তৈরি স্বামীনারায়ণের মূর্তি। ওই ঘরের ভিতরে কয়েক জন পুরোহিত দর্শনার্থীদের চরণামৃত দিয়ে আশীর্বাদ করছেন, তবে এইবার আর সেই আশীর্বাদটা পাওয়াটা একেবারে বিনা পয়সায় হবে না, এর জন্য ৫০ টাকার কুপন কেটে ভিতরে ঢুকতে হবে।

লাইন দিয়ে বেরিয়ে এসে আবার বাইরের চাতালে এসে দাঁড়ালাম, এর তলায় দাঁড়িয়ে মন্দিরটাকে ভালো করে দেখলে বোঝাই যাবে যে কি বিশাল উঁচু মন্দির। মাথায় অনেকগুলো বিভিন্ন উচ্চতার চুঁড়ো। প্রত্যেকটার উপরেই চকচক করছে সোজা দাঁড় করানো পিতলের বড়ো থেকে ছোট তিনটে করে কলস, আর প্রত্যেকটা কলসের থাকের পাশে উপরে চৌকো আচ্ছাদন দেওয়া একটা করে পিতলের রড আর তার গায়ে উড়ছে একটা করে লাল সাদা পতাকা।

এবার দুপুরের খাওয়া সারতে সেই বিরাট ক্যান্টিনটায় ঢুকতে হবে, সবটা ঘুরে দেখতে দেখতে প্রায় বেলা তিনটে। তখন শুধু খিচুড়ি ভোগের থালি পাওয়া যাচ্ছে একদম গরম গরম পরিবেশন, দারুন লাগবে খেতে।

সারা ভারতবর্ষে এমনকি বিদেশের কয়েকটা শহরেই স্বামীনারায়ণের মন্দির আছে। এই মন্দিরটাকে কেন্দ্র করে দেশ বিদেশের বহু ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের জন্যে জোকা আর ভাসায় অনেক গুলো ভালো বড় হোটেলও গড়ে উঠেছে। কোনো একটা ছুটির দিনে সপরিবারে দেখে আসুন কলকাতার একেবারে উপকন্ঠে এই স্বামীনারায়ণ মন্দির, কথা দিতে পারি খুব ভালো লাগবে।

যাতায়াত ব্যবস্থা ঃ যদি মেট্রোতে আসেন তবে নেমে পড়ুন উত্তমকুমার স্টেশনে, উল্টো দিকে খানিকটা এগিয়ে বেহালা চৌরাস্তা, কিংবা ঠাকুরপুকুর যাওয়ার অটো ধরে পৌঁছান যান ডায়মন্ড হারবার রোডে। সেখান থেকে যেকোনো আমতলাগামী বাস বা অটো ধরে এক্কেবারে সোজা স্বামীনারায়ণ মন্দির।

তারপরে ভেতরে অনেকটা সময় কাটিয়ে সন্ধে ছটায় বাইকটা পার্কিং লট থেকে বার করে বাইরে বেরিয়ে পড়ুন (যারা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাবেন আর কি), উল্টো ফুটে বেশ কয়েকটা চায়ের দোকান। এক কাপ চা নিয়ে খেলাম, আরে অনেক্ষন চা খাওয়া হয়নি যে। এবার চা খেয়ে বাড়ি ফেরার পালা।

চিত্র ও তথ্যসূত্র ঃ জয় গুহ।

Advertisements

Leave a Reply