সারা বিশ্ব জুড়ে কেন আজকের দিনে খ্রীস্ট বিশ্বাসীরা গুডফ্রাইডে বা পুণ্য শুক্রবার পালন করেন?

0

HnExpress বিশেষ প্রতিবেদন, ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত ঃ গুড শুক্রবার (Good Friday) এর পরেই ইস্টার রবিবার (Easter Sunday) বা পূণ্য রবিবার (Holy Sunday), যা যীশু খ্রীস্ট এর পুনরুত্থিত দিবস নামেও পরিচিত। যুগ যুগ ধরে ১৯ এপ্রিল সারা বিশ্ব জুড়েই পালিত হয়ে খ্রিষ্ট বিশ্বাসী ও তাঁর অনুগামী মানুষদের এই বিশেষ দিনটি। এবং অতঃপর ২১ শে এপ্রিল পালিত হয় পূণ্য রবিবার বা ইস্টার সান্ডে, অর্থাৎ ঈশ্বর কর্তৃক মনোনীত তাঁর একজাত প্রিয় পুত্র যীশু খ্রীস্টের পুনরুত্থান দিবস। “কারণ ঈশ্বর জগৎ কে এমন, এমন প্রেম করিলেন, যে আপনারও একজাত পুত্র কে দান করিলেন, যেন যে কেহ তাহাতে, তাহাতে বিশ্বাস করে! সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত, অনন্ত জীবন পায়”। যোহন; ৩ঃ১৬ পদ।

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য গুড ফ্রাইডে বা পূণ্য শুক্রবার এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এই দিনেই যীশু খ্রিস্টকে বিনা অপরাধে শুধুমাত্র সকল জাতির পাপ ক্ষমার নিমিত্ত বলি স্বরূপ ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, যা ইতিহাসের পাতায় Crucifixion of Jesus Christ নামে অবিহিত করা হয়। ক্রুশের ওপরে তিনি নিজ দেহে আমাদের সমস্ত পাপের বোঝা বইলেন, যেন আমরা আমাদের পাপের দিক থেকে মৃত হয়ে ধার্মিকতার জন্য জীবনযাপন করি। পিতরের ১ম পত্র 2:24 (Peter’s 1st letter He, on the cross, burdened us with all our sins, so that we die from our sins and live for righteousness).

বস্তুত এই দিনটিকে খ্রিষ্টের মৃত্যুদিন হিসেবেই স্মরণ করা হলেও, ইতিহাস এবং পবিত্র বাইবেল শাস্ত্র বলছে, যে তিনি ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পর আবার তিনদিনের দিন অর্থাৎ ইস্টার সান্ডে বা পূণ্য রবিবারে পুনরায় উত্থাপিত হন এবং তাঁর সকল অনুগামীদের ও বিশ্বাসী ভাইবোনেদের পুনরায় দর্শন দেন ও পুর্বের মতই ৪০দিন যাবৎ তাদের মাঝে থেকে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করেন। তারপর তিনি স্বর্গের পথে যাত্রা করেন। আর তাই এই দিনটিকে প্রতিটি গীর্জা ঘরে সকল খ্রীষ্ট বিশ্বাসী পুনরুত্থান এর দিন বলে পালন করেন।

কথিত আছে, জুডাসের বা ঈষ্করিয়োতীয় যিহুদার বিশ্বাসঘাতকতার জেরেই যিশু খ্রিষ্টকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল, যদিও পবিত্র বাইবেল মতে এটি ঈশ্বর নিরূপিত ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ ছিল। তাই পবিত্র শাস্ত্রমতে খ্রিস্ট বিশ্বাসী বা তাঁর অনুগামীরা বিশ্বাস করেন যীশুকে যে দিনেটিতে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল সেই দিনটিকে গুডফ্রাইডে বা পূণ্য শুক্রবার এবং তিন দিন পরে আবারও তিনি পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠেন পুর্বে কথিত শাস্ত্রমতে- যাকে ইস্টারসান্ডে বা পূণ্য রবিবার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

এই তিন দিনকে বাইবেল শাস্ত্রমতে এক সাথে যীশুর পুনরুত্থানের পর্ববিশেষ বা Easter Triduum নামে ডাকা হয়। গুড ফ্রাইডের মধ্যে ‘গুড’ শব্দটি আসলে “পবিত্র বা পূণ্য” অর্থ বহন করে। বিশ্বের বেশিরভাগ অংশেই গুড ফ্রাইডে একটি ঘোষিত জনসাধারণের ছুটির দিন। যা কিনা যীশু খ্রিষ্টের মৃত্যু সমস্ত মানবজাতির পাপের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর পাপের নিমিত্ত মৃত্যু ও ক্ষমার প্রতীক হিসেবেই ছিল।

তাই সমগ্র জাতি বিশ্বাস করেন যে, যীশু খ্রীস্ট, যিনি ঈশ্বর পুত্র, তিনি সমস্ত মানুষের ও সমগ্র জাতির পাপ মোচন ও তাদের মঙ্গলার্থের জন্য এই চরম দুঃখভোগ নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেন এবং তার ফলস্বরূপ আমাদের জঘন্য থেকে জঘন্যতম পাপের নিমিত্ত চূড়ান্ত বলিদান গ্রহণ করেন।

মৃত্যুর পুর্বে যীশু খ্রীস্ট মাত্র ৭টি অমূল্য বাক্য উচ্চারণ করেন, যাকে “ঈশ্বরের বাণী” বা “Word of God” বলা হয়। সেই ৭টি মুল্যবান বাক্যের ভিতর তাঁর চতুর্থ বাক্যটি হল— ‘আর নয় ঘটিকার সময় যীশু উচ্চরবে চিৎকার করিয়া ডাকিয়া কহিলেন, ” এলী এলী লামা শবক্তানী,” অর্থাৎ “ঈশ্বর আমার ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?”। মথি লিখিত সুসমাচার– ২৭ঃ ৪৬ পদ‘।

যীশু কহেন-
সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে।
আমিই জীবন খাদ্য।
এ সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আইসে, যেনো লোকে তাহা খায় ও না মরে।
আমিই সেই জীবন্ত খাদ্য যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে। কেহ যদি এ খাদ্য খায় সে অনন্তকাল জীবিত থাকিবে, আর আমি যে খাদ্য দিবো সে আমার মাংস, যা জগতের জীবনের জন্য। যোহন ৬:৪৮-৫১

Leave a Reply

%d bloggers like this: