December 11, 2024

ক্ষমতার লড়াইয়ে আত্মঘাতী গোল খাওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়াতে করণীয় কয়েকটি বিষয়ে পাঠকের আত্ম সমীক্ষা

0
Logolicious 20190603 171445.jpg
Advertisements

HnExpress সাবির হোসেন হালদার, পাঠকের কলমে ঃ একটা দেশ বা রাজ্যের উন্নতি যদি সামগ্রিক অর্থে বোঝানো হয় তাহলে সেই দেশের সকল জাতি, সম্প্রদায়, মানব সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদির উন্নয়ন খুবই দরকার। শাসক দল কোনো বিশেষ সম্প্রদায়কে নিয়ে নাচানাচি করলে বা অন্যদেরকে অবহেলা করলে যথার্থ রাজধর্ম পালন করা হয় না। যদিও বর্তমানে এটাই আমাদের রাজ্য ও দেশের রাজনৈতিক চিত্রপট। এইভাবে বৈমাত্রেয় সুলভ আচরণ কেন? এই বিভাজনের রাজনীতি করে কার কি উন্নতি সাধন হচ্ছে? আজ সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দু তোষণ নাকি সংখ্যালঘু মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব বিজেপিকে ক্ষমতার অলিন্দে টেনে আনলো? আর অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস দল বাহ্যিক ভাবে মজবুত হলেও হঠাৎ করেই বা অভ্যন্তরীণ ভাবে ভঙ্গুর হয়ে গেলো কেন? দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যর্থতার কারণ ও স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে ঘুরে আবার দাঁড়ানোর উপায়ের বিষয় কিছু আলোচিত হলো এখানে :

প্রথমত: মুসলিমদের জন্য কিছু না করেও অনেক কিছু করা হয়েছে বলে ভুল প্রচার। ইমাম ভাতা বা মোয়াজ্জেম ভাতা রাজ্য সরকার দেয় না। ওটা ওয়াকফ বোর্ড থেকে পাওয়া প্রাপ্ত অর্থ থেকে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডও বর্তমানে দুর্নীতিগ্রস্থ। আর কলকাতার ইস্টবেঙ্গল, মোহামেডান ক্লাব প্রাঙ্গণ, রাজভবন, রেসকোর্সের মাঠ, ইডেন গার্ডেনের মতো বিশেষ ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলো ওয়াকফ বোর্ডেরই আওতাধীন। বহু সম্পত্তি আছে যা সরকার ইচ্ছা করলে উদ্ধার করতে পারে যার, ফলে ওয়াকফ বোর্ডের আয় আরো বাড়তে পারে। পিছিয়ে পড়া মুসলিম জাতির উন্নতিতে ওই অর্থই যথেষ্ট হতে পারতো, সরকারের কোষাগার থেকে বিশেষ অর্থ দেওয়ার দরকার নেই। তাই সরকার সস্তার জনপ্রিয়তা পেতে মিথ্যা ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা প্রথমে বন্ধ করুক।

দ্বিতীয়ত : ধর্মের ভিত্তিতে সরকার কোনো ভাগ করে সুবিধা দিতে পারে না। ঘটনাক্রমে এই সরকার শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করেছে বলে মনে হয় না। সরকারি টাকায় যতটুকু উন্নতি করেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে তা সকলের জন্যই। মুসলিমদের জন্য সরকার আলাদা করে কিছু করেনি, তাই রাজ্যের প্রধান হিসাবে মমতা ব্যানার্জির সরকার সংখ্যালঘুদের বিশেষ প্রশংসা চেয়ে সংখ্যা গুরুদের কাছে সমালোচনার পাত্রী হতে পারেন না। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সকার বিশেষ ব্যবস্থা করতেই পারে, কিন্তু তা ধর্মের ভিত্তিতে নয়। এখানে উল্লেখ্য, ইফতার পার্টিতে গিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো উন্নতি হয় না, বরং অন্যান্য ধর্মের অসহিষ্ণু অনুরাগীদের ক্ষেপিয়ে তোলা হয়।

তৃতীয়ত : বাংলাকে বিরোধীশূন্য করার জঘন্য পরিকল্পনা থেকে এখুনি সরতে হবে। শাসক দলের সমালোচনা করার অধিকার কেড়ে নিলে স্বৈরাচারী হয়ে যায় সরকার। এখানেও তাই হয়েছে, সরকার প্রথম থেকে সহনশীল হয়নি। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনীতে ক্ষত আওরঙ্গজেব এর দক্ষিনাত্য নীতির নামান্তর। বরং সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে রুখতে তৃণমূল কংগ্রেসের উচিত কংগ্রেস ও সিপিএমের সর্বতো সাহায্য করা, যাতে সরকারকে বিরোধিতার ক্ষেত্রে বিজেপির পরিবর্তে কংগ্রেস ও সিপিএম প্রধান বিরোধী মুখ হয়ে তাদের রাজনৈতিক জমি ফেরত পায়।

পঞ্চমত : ২০১৯ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণতন্ত্রকে খুন করে নমিনেশন ফাইল করতে না দেওয়া, আর মানুষের মনে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া। এখন তৃণমূল কংগ্রেস সাধারণ মানুষের অধিকার, বিরোধিতা করার অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে ভালোবেসে তাদের আপন করে নেওয়াই শ্রেয়। কোনো ভাবেই কোনো সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া নয়।আবার “জয় শ্রী রাম” জাতীয় ধর্মীয় ভাবাবেগ কে রাজনীতির বাইরে রেখে ধর্মীয়ভাবে সহিষ্ণু হতে হবে।

ষষ্ঠত : সংবাদ মাধ্যমকে দোষারোপ করে তাদের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে বিরোধিতার রাস্তা নিজ হাতে খুলে দেওয়া। বরং শিব তকমা সংবাদ মাধ্যমকে নিজের অনুকূলে আনার ও রাখার সার্বিক চেষ্টা করা উচিত।

সপ্তমত : ৪২ এ ৪২ এর স্বপ্ন দেখে সবার সাথে শত্রুতা করা, যার ফলে শত্রু শত্রুকেই বন্ধু হতে সাহায্য করেছে। এখন পাশা উল্টে শত্রুর বন্ধুকে নিজের বন্ধু বানাতে হবে।

অষ্টমত : divide and rule পদ্ধতি প্রয়োগ করে কংগ্রেস বা বামের একজনকে সাথে রেখে বাকিদের বিরুদ্ধে সমান্তরাল লড়াই চালিয়ে বিরোধী শক্তিকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা যেতেই পারে।

নবমত : ভারতব্যাপি বিজেপি বিরোধী জোট গড়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ এসেছিল মমতা ব্যানার্জির সামনে; কংগ্রেসকে সাথে নিয়ে অনায়াসে সেই কাজ করতে পারতেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কিন্তু সেই জ্যোতি বসুর মতো ঐতিহাসিক ভুল করে বসলেন তিনিও। আর ফল স্বরূপ বিরোধীদের মুখ হতে বাইরে থেকে নেতৃত্ব না দিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মোদি বিরোধী হাওয়া কে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে পুরো দেশকে এক ছাতার নীচে আনার সুযোগ হাতছাড়া হলো লোকসভা নির্বাচনে। আবার সামনের দিকে তাকিয়ে সেই প্রক্রিয়া শরু করা, নিজেকে flexible রাখা, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ রাখা, ঠান্ডা মাথায় ধীরে সুস্থে বক্তব্য রাখা আর জায়গা বুঝে কথা বলা।

দশমত : সরকারি চাকরিজীবী ও বুদ্ধিজীবী মহলের সাথে বিভিন্ন কারণে দূরত্ব তৈরি হওয়া। বেকার যুবক যুবতীদেরকে উপযুক্ত কর্মসংস্থান এর দিশা দেখাতে ব্যর্থ হওয়া। মুসলিম দরদী সেজেও মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ না করে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। তাই ভিন্ন শ্রেণীর অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের থেকে প্রতিনিধি ডেকে সমস্যা কি বোঝানোর চেষ্টা করা ও সমাধানের উপায় খোঁজা। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য “টাকা থাকলেই চাকরি পাওয়া যায়, শাসক দলকে তৈলমর্দনে পদোন্নতি হয়,” এমন ধারণা মানুষের মন থেকে মুছে দিয়ে প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে হবে।

একাদশমত : পুলিশ প্রশাসন, আইন বিভাগ, সরকারি অন্যান্য দফতর নিজেদের স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রতা হারিয়ে দলদাসে পরিণত হয়ে জনগণের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে, আর এর প্রভাব সরকারের জনপ্রিয়তায়ও অনেকাংশে কমে গিয়েছে। সংস্থাগুলোকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে সর্ব অবস্থায় তাদের অধিকার, মর্যাদা ও পরিষেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সকলকে কাছে পাওয়া সম্ভব না হলেও, কমপক্ষে ৬০% মানুষকে ভালোবেসে সারাজীবনের মতো কাছে নিতে হবে, ভয় দেখিয়ে বা জোর করে বলপূর্বক সাময়িকভাবে কাছে নিলে সেই কার্যসিদ্ধি হবে না। নির্দিষ্ট মাত্রার মানুষকে বিরোধী হিসাবেই ছেড়ে রাখতে হবে ও বিরোধিতা করতে দিতে হবে, তাদেরকে নিজেদের লোক বলে হিসাবে রাখা যাবে না, আবার তাদের কথায় react ও করা যাবে না।

পরিশেষে উল্লেখ করা ভালো, দলে প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। আর ধমকানি চমকানির পরিবর্তে মতামত বিনিময়ের মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেস দলকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলতে হবে। কর্মী ও নেতাদের মতামত প্রকাশ করতে দিতে হবে ও গ্রহণযোগ্য সেই মতামতকে গুরুত্ব সহকারে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতে হবে। আর এর পাশাপাশি অবশ্যই শক্ত হাতে দুর্নীতিকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

Advertisements

Leave a Reply