সম্পাদকের কলমে ঃ স্বাতী, কুমারীগ্রাম আর একটি কম্পিউটার

1

HnExpress সম্পাদকীয়, কলকাতা : সহকর্মী অনেকেই হন। কিন্তু কিছু সহকর্মীর মধ্যে পারস্পরিক বন্ডিংটা হয় একটু অন্য রকম। স্বাতী ভট্টাচার্য এরকমই একজন। যখন আনন্দবাজার পত্রিকায় ছিলাম, বেশ কিছুকাল আমার আসনের কয়েক ফুটের মধ্যে ছিল ওর আসন। মাঝে মাঝেই স্বভাবসিদ্ধ নরম স্বরে বলত, “দাদা, অনেকদিন লেখা দিচ্ছেন না কিন্তু।“ যখন যে পাতার দায়িত্বে ছিল, সম্মানের সঙ্গে আমার লেখা ব্যবহার করেছে বার বার। সেই স্বাতীর একটা কাজ খুব নাড়া দিল। ছোট্ট, কিন্তু কাজটার গভীরতা অনেকখানি। এটা একটা খবরও বটে!

লেডি ব্রাবোর্ন ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শণশাস্ত্রের প্রাক্তনী। স্কটল্যান্ডের স্টার্লিং ইউনিভার্সিটির মিডিয়া রিসার্চে এমএসসি, ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিট্যুট অফ টেকনোলজির ফুলব্রাইট স্কলার, ই্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সোস্যাল সায়েন্স রিসার্চের সিনিয়ার ফেলো, টাটা ইন্সটিট্যুট অফ সোস্যাল সায়েন্সের সমাজবিজ্ঞানে পিএইচডি। এর পর দি টৈলিগ্রাফে ক’বছর কাটিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায়। এখন ওখানে সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট এডিটর। আবার হরেক রকম অন্য কাজের সঙ্গেও যুক্ত। এর অন্যতম স্বাতী হল ‘সাউথ এশিয়ান উওমেন ইন মিডিয়া’ (সোয়াম)-এর ভারতীয় শাখার কর্ত্রী।

বেশ কয়েক দশক ধরে দেখেছি সমস্যার গভীরে ঢুকে সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করে স্বাতী। রীতিমত অন্তর দিয়ে। তা সে গ্রামের গরিব চাষির আয়বৃদ্ধিই হোক বা মহিলা শ্রমিকের স্বাস্থ্য, উপকূলের জেলেদের পুষ্টি থেকে কৃষির ফলনবৃদ্ধি। নিবিড় যোগাযোগ অমর্ত্য সেনের প্রতীচি ট্রাস্টের মত কিছু গবেষণা সংস্থার সঙ্গে। নিচু স্বরে কথা। কোনও আত্মম্ভরিতা নেই। প্রচার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা।

এ হেন স্বাতী বুধবার ফেসবুকে একটা সচিত্র পোস্ট দিয়ে বসল। ঝাড়গ্রামের আগুইবনী গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কুমারী গ্রামের প্রাথমিক স্কুল এটি। শুধু দেখতে অপরূপ, তাই নয়। ছয়-সাতটি ছেলেমেয়ে বাদ দিলে স্কুলের ছেষট্টি ছাত্রছাত্রীর সক্কলে সাবলীল ভাবে লিখতে পড়তে পারে। গ্রামের মানুষদের নিয়ে ফি মাসে সভা হয়। প্রতি বছরের গোড়ায় স্কুলের জন্য সকলে টাকা দেন, অভিভাবকরা দুশো টাকা, অন্য গ্রামবাসী একশো টাকা। তাতে স্কুলের নানা কাজ চলে। অনেকে বাগানে স্বেচ্ছাশ্রমও দেন। স্কুলটির হেডমাস্টারমশাইয়ের ইচ্ছে, স্কুলে একটি কম্পিউটার আসুক। পুরনো হলেও হবে, চালু থাকতে হবে। থ্রি-ফোরের ছেলেমেয়েরা শিখবে, অফিসের কাজও হবে। আজকাল স্কুলের অনেক তথ্য রাখতে হয় কি না। কোনও সাজেশন থাকলে ইনবক্স করুন প্লিজ।

ভাল কাজ সত্যিই বুঝি কখনও আটকে থাকে না। ২৪ ঘন্টা না কাটতেই ৫১৩টি লাইক,১২২টি কমেন্ট, ৮৩টি শেয়ার। প্রচারবিমুখ এক ব্যক্তি কম্পিউটার দিতে চাইলেন। আমি নিশ্চিত, আরও কেউ কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। এ রকম ছোট্ট ছোট্ট নীরব আবেদন কীভাবে কাজে দেয়, কত জনের মুখে হাসি ফোটায়, সেটা তো লিখে বোঝানোর নয়! পুরোটাই অনুভবের ব্যাপার।

1 thought on “সম্পাদকের কলমে ঃ স্বাতী, কুমারীগ্রাম আর একটি কম্পিউটার

Leave a Reply

%d bloggers like this: