কাঁচের দেয়ালের ধূসর ছবি
HnExpress দেব চক্রবর্তী , কলকাতা : ‘ সব কিছু নিয়ে গেলে যা দিয়েছিলে’- আনন্দ হাসি গান সব তুমি নিলে’ তাঁর কথা বলতেই বারবার এই গানটির কথাগুলো বড় ভাবায়। ভাবতে ভাবতে পারি দিতে হয় ষাটের দশকে। তৎকালীন নিতান্ত এক যুবক সদ্য যোগদান করলেন চেতনা নাট্যগোষ্ঠীতে। কর্ণধার ছিলেন প্রবাদপ্রতিম নাট্যব্যক্তিত্ব অরুণ মুখোপাধ্যায়। তাঁরই হাত ধরে মঞ্চে পদার্পণ অভিনেতা বিপ্লবকেতন চক্রবর্তীর।
তাঁর অভিনীত প্রথম প্রযোজনা ‘মারীচ সংবাদ’ বাংলা ছাড়িয়ে বন্দিত হয় সারা বিশ্বে। অসাধারণ অভিনয় আজও বাংলা নাট্য অভিনয়ের একটি মাইলস্টোন। দুরন্ত অভিনয় ক্ষমতায় একের পর এক নাট্য চরিত্রে শেষ কথা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পেয়েছেন দেশে বিদেশে বহু পুরষ্কার ও সম্মাননা। কর্মসূত্রে তিনি ছিলেন রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মচারী। এই চূড়ান্ত নাটক পাগল বিপ্লবকেতনবাবু শুধু থিয়েটারেই আবদ্ধ থাকেন নি। তাঁর যথাযোগ্য সুনাম নিয়েই দূরদর্শন ও বড় পর্দায়ও দারুণ দাপট দেখিয়ে অভিনয় করে গেছেন স্বছন্দে। একসময়ে ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে তিনি ‘চুনী’র চরিত্রে অভিনয় করে হয়ে উঠেছিলেন প্রায় আইকন। চুনী-পান্না ধারাবাহিকটি দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা ।
চেতনা নাট্য গোষ্ঠীতে তিনি ছিলেন অঙ্গস্বরূপ। যদিও পরবর্তীকালে তিনি ‘থিয়েটারওয়ালা’ প্রতিষ্ঠা করে বাংলা নাট্যজগতকে দিয়েছেন একের পর এক মঞ্চসফল প্রযোজনা। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কাঁচের দেওয়াল’। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তাঁর মনোমুগ্ধকর অভিনয় বাংলার নাট্য ইতিহাসে গ্রথিত হয়ে থাকবে।
নাট্যকার , অভিনেতা , নির্দেশক বিপ্লবকেতন চক্রবর্তী নাট্যজগৎ থেকে সরে এসেছিলেন আগেই। ডিমনেশিয়া নামক এক বিরল রোগে ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। আজ ভোর ৪-৪০ নাগাদ চিরলোকে যাত্রা করলেন নাট্যজগতের এই বৃহৎ গ্রহ। রেখে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় নিঙরানো ভালোবাসো , তিন স্বনামধন্যা অভিনেত্রী কন্যা বিদীপ্তা চক্রবর্তী , সুদীপ্তা চক্রবর্তী ও বিদিশা চক্রবর্তী ও স্বনামধন্যা স্ত্রী বিশিষ্ট ওডিশি নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষিকা দিপালী চক্রবর্তী।
আদ্যপ্রান্ত স্বচ্ছ , সদাহাস্য , পরোপকারী এই ব্যাক্তিত্বের প্রয়াণে বাংলা নাট্য ও চিত্র জগতে নেমে এলো ধূসর ছায়া। মুহ্যমান জগৎ খুঁজে বেড়ান কাঁচের দেওয়ালের সেই মানুষটিকে ।
আজ নাট্যজগৎ অভিভাবকহীন ।
বড় দুঃখজনক । বলার ভাষা নেই । জীবনে আরও একজন শিক্ষক হারালাম ।