কাঁচরাপাড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কলহে জখম কিশোরী বর্ষাকে রক্ত দিল সিভিক পুলিশ
HnExpress দেবাশিস রায়, কাঁচরাপাড়া : পুজোর বিসর্জনের দিন কুলিয়া রোডে সোমবার, ২২ অক্টোবর বোমাবাজিতে গুরুতর আহত হয় বর্ষা নামে এক কিশোরী।
ঘটনা সূত্রে প্রকাশ, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কাঁচরাপাড়ার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জোনপুরের একটি তৃণমূল পার্টি অফিসে বোমাবাজি হয়। চলে ভাঙচুরও। অভিযোগের আঙুল ওঠে তৃণমূলেরই অপর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। বোমাবাজি চলার সময় মায়ের সঙ্গে ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরছিল বছর দশেকের কিশোরী বর্ষা সরকার। বোমার আঘাতে আহত হয় বর্ষা। তার কোমরে ও পায়ে বোমার স্প্লিন্টার ঢুকে যায়। বর্ষাকে প্রথমে কাঁচরাপাড়া রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে। বর্ষার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বুধবার, ২৪ অক্টোবর সকালে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্ষাকে ভর্তির পরই তিনজন ডাক্তারকে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গড়া হয়। বৃহস্পতিবার সেই বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় তার জরুরি অপারেশন করা প্রয়োজন। খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান এই কেসে বীজপুর থানা আইও দিলীপ মুখার্জি। তিনি কথা বলেন হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে। পরদিন শুক্রবার বর্ষার অপারেশনের তোড়জোড় শুরু হয়। এদিনও হাসপাতালে হাজির ছিলেন এই কেসের আইও দিলীপ মুখার্জি। এদিকে বর্ষার অপারেশনের জন্য প্রয়োজন ছিল দুই ইউনিট রক্ত। বর্ষার পরিবারের লোকজন কোনও মতে ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে বর্ষার জন্য এ+ এক ইউনিট রক্ত জোগাড় করলেও আরেক ইউনিট রক্ত মিলছিল না। এসময় এগিয়ে আসেন বীজপুর থানার সিভিক ভলেন্টিয়ার অতনু দাস।
অতনু এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, যখন রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন আইও দিলীপবাবুকে জানান যে তারও এ+ রক্ত। সে কি বর্ষার জন্য রক্ত দিতে পারে! দিলীপবাবু এককথায় অতনুকে রক্ত দিতে অনুমতি দেন। অতনু জানান, অনেক ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। তাই বাবার বয়সী স্যারের অনুমতি নিয়েই এগিয়ে এসেছি রক্ত দিতে। অবশেষে বর্ষার অপারেশন সম্পন্ন হয়। তার অবস্থা স্থিতিশীল। অপারেশন সাকসেস হয়েছে। তবে ৫০ গ্রাম ওজনের স্প্লিন্টার বেরিয়েছে বলে এলাকার একটি সংবাদমাধ্যমে যা প্রচার হয়েছে তা সঠিক নয়। এই কেসে বীজপুর থানার আইও দিলীপ মুখার্জি জানান, তিনি হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে এদিনও দেখা করেন। সুপার তাঁকে জানিয়েছেন, দুয়েকদিন বর্ষাকে আইসিইউ-তে রাখা হবে। তারপর দেওয়া হবে সাধারণ বেডে। কয়েকদিন আপাতত তাকে হাসপাতালে রাখারই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও দিলীপবাবুকে জানিয়েছেন সুপার। তবে বর্ষার সঙ্কটজনক অবস্থা বর্তমানে না থাকলেও বাড়ি ফেরার পর নিয়মিত ড্রেসিংয়ের ব্যবস্থাটাতেও যত্নবান হওয়া খুবই জরুরি বলেও সুপার দিলীপবাবুকে জানিয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে যখন বর্ষার অপারেশনের কাজ চলছে তখন এলাকার ওই সংবাদমাধ্যম প্রচার করে দেয় বর্ষার অবস্থার অবনতি হয়েছে। এমন বিশ্রী সংবাদ পরিবেশনের জন্য বীজপুর পুলিশ প্রশাসন ও এলাকার মানুষ যারপরনাই ক্ষুব্ধ। বীজপুর পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার এঘটনায় অভিযুক্ত ও ধৃত চার তৃণমূল যুবনেতা ও কর্মীকে ফের আদালতে তোলা হবে। যতোদূর জানা গেছে, ধৃতদের জামিনের বিরোধিতা করা হবে পুলিশের তরফে। কেননা, এই মুহূর্তে বীজপুরের যা পরিস্থিতি তাতে ধৃতরা ছাড়া পেলে সাধারণ মানুষের চোখে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণই হবে।
আদর্শ খবর । সত্যান্বেষী…..