সাপ্তাহিক সম্পাদকীয় : করুণা চায় না আজকের শৈশব
HnExpress সম্পাদকের কলমে : নৈহাটিতে বাড়ি ছেলেটির। মা ও ভাইকে নিয়ে তিনজনের সংসার। বাবা তাদের ছেড়ে অন্যত্র কোথাও থাকেন। ছেলেটি রোজ ট্রেনে হকারি করে। আবার স্কুলেও যায়। আরও একটা কথা বলার, ও কিন্তু ট্রেনে কারো দান নেয় না। এটা অনেকেই জানেন তাই কয়েক প্যাকেট বাদাম কিনে নেন তাঁরা। ওর মেরুদণ্ডকে সম্মান করার মতোই।
সম্প্রতি কল্যাণী লোকালের ঘটনা। ছবিটি দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, যাত্রীবোঝাই ট্রেনে একটি ছেলে প্লাস্টিকের প্যাকেটে গুড়বাদাম বেচছে। কচি মুখে চেঁচিয়ে বলছে, বাবু, নিয়ে যান গুড়বাদাম, প্রতি পিস ১০ টাকা। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পিঠের ব্যাগটি দেখে কৌতূহল হয় সবারই।
এবার পরেরটুকু জেনে নেওয়া যাক।
এক যাত্রী বললেন, এই ছেলে, পিঠের ব্যাগে কী আছে, গুড়বাদাম?
সে অবলীলায় জানালো, না।
তবে কী আছে তোর ব্যাগে? একটু ঝাঁঝাল সুরেই বললেন ওই যাত্রী।
ছেলেটি ততোটাই শান্ত স্বরে বলল, বইখাতা।
— তুই স্কুলে পড়িস?
— হ্যাঁ। বলেই পরনের স্কুল ইউনিফর্ম আর বুকপকেটে লাগানো স্কুলের ব্যাজ দেখাল।
জানালো কেষ্টপুরের হোলি চাইল্ড স্কুলে ক্লাস টুতে পড়ে।
স্কুলের পর ছেলেটি স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই রোজ গুড়বাদাম বেচতে নেমে পড়ে ট্রেনে। যা রোজগার হয় তাই দিয়ে চলে সংসার। কেননা ওইটুকু ছেলের উপরই সংসারের ভার? ভাবতেই বুকটা ভীষণ মোচড় দিয়ে উঠবে যে কারো। একসময় ট্রেনে গুড়বাদাম বেচতে বেচতে ছেলেটি হাই তোলে। একসময় একটি সিটে বসে পড়ে। বসে থাকতে থাকতে গভীর ঘুমে এলিয়ে পড়ে সে।
নাকি একটি শৈশব ঘুমিয়ে পড়ল? প্রতিদিন এভাবে কত শৈশব ঘুমিয়ে পড়ছে, কে জানে! তবে একটা কথা, সে কিন্তু কাউকেই তার নাম ও ঠিকানা জানাতে চায় না। তার হয়তো একটাই কারণ বোধহয় কেউ যদি করুণা করে!