November 7, 2024

এবারে করোনার থাবায় আক্রান্ত হয়ে ২ জনের মৃত্যু হলো হাওড়ায়

0
Advertisements

HnExpress ১লা এপ্রিল, অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া : এবারে করোনার থাবায় আক্রান্ত হয়ে ২ জনের মৃত্যু হলো হাওড়ায়। নোভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এই রাজ্যেও বসিয়েছে তার করাল থাবা। গত ৩০ শে মার্চ পর্যন্ত এই রাজ্যে কোয়ারেন্টিনে থাকার সংখ্যা ছিল ৪৭,০৯১ জন। বর্তমানে স্বাস্থ্য দপ্তর সুত্রে, সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,৫০,০০০ (দেড় লক্ষ)। এ রাজ্যে ৩১ মার্চ পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হলো ৩৭। মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।

রাজ্যের ৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ইতিমধ্যে করোনা মুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িও ফিরে গেছেন। চিকিৎসকরা তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। রাজ্যের স্বাস্হ্য সচিব আগামী ১৪ দিন রাজ্যবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক আধিকারিক, স্বাস্থ্য কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য-সদ্যস্যা, বিভিন্ন ক্লাব-সংগঠনের কর্মী, সদস্য-সদস্যা, সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী এবং সমর্থকদের জনগণের পাশে থেকে সমস্ত সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলায় তৃতীয় জনের মৃত্যুর খবরে জানা যায়, হাওড়া জেলার হাসপাতালে সালকিয়ার ৪৮ বছর বয়সী এক মহিলা গত রবিবার রাতে ভর্তি হন। সোমবার সন্ধ্যায় রিপোর্ট আসার আগেই তিনি মারা যান। জানা গেছে, ও মহিলা ও তার স্বামী গত ৬ই মার্চ উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে বেড়াতে গিয়েছিলেন। আর সেখান থেকে ফিরেছিলেন ২৩শে মার্চ। হাওড়া জেলা হাসপাতাল সূত্রে এই মহিলার মৃত্যর কারণ হিসাবে করোনাকে দায়ী করা হয়।

হাওড়ার জেলা হাসপাতালে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর খবর প্রকাশ হওয়ার পরই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের অভিযোগ সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত জেনারেল ওয়ার্ডেই ওই রোগীকে অন্য রোগীদের সঙ্গেই রেখে দেওয়া হয়। সোমবার রাতে ওই রোগীর রিপোর্ট আসার আগেই মারা যান সে। চিকিৎসক ও নার্সদের অভিযোগ, করোনার সমস্ত উপসর্গ রোগীর শরীরে থাকা সত্ত্বেও অন্য রোগীদের মতোই ওই মহিলার শুশ্রূষা করতে বাধ্য হয়েছিলাম।

এদিনের কর্তব্যরত নার্সেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বলেছেন, করোনার সমস্ত উপসর্গ রোগীর শরীরে থাকার জন্যই আমরা রোগীর অবস্থা দেখেই তাকে বার বার আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থার দাবি করা হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট তাতে পাত্তা দেননি। রোগীর মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে কর্মরত সকল নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকরা কোয়ারান্টাইনে তাদের রাখার দাবি করেন বলে জানা গেছে। তারা অভিযোগ করেন, ওই রোগীকে অন্যত্র রাখার জন্য, আমাদের সমস্ত রকম প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা সত্ত্বেও আমাদের কথার কোনো কর্ণপাত না করে অন্য রোগীদের সঙ্গেই ওনাকে রাখা হল।

 

 

আমাদের কোনো প্রোটেকশন না দিয়ে ওই রোগীর দেখ ভাল করতে বাধ্য করা হয়েছে।
মৃতার ছেলে জানিয়েছেন, ২৩ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত মায়ের হাঁচি, কাশি-সর্দির কোনো উপসর্গই ছিল না। তারপর সামান্য কাশি দেখা দেয়। রবিবার বেশি হওয়ায় প্রথমে মাকে ঘুসুড়ির সত্যবালা আই,ডি, হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় জয়সওয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সেখানেও রোগীকে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা।

তারপর হাওড়া জেলা হাসপাতালে মা’কে নিয়ে আসার পর সাধারণ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তিনি আরও বললেন, রবিবার রাতে মা’কে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। আর সোমবার রাতে মা’য়ের পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। রিপোর্ট পজিটিভ ছিল। তবে রিপোর্ট আসার আগেই সন্ধ্যা বেলায় মা’য়ের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরাসরি জেলা হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নার্স চিকিৎসারা বলেছেন, যে এই বিষয়টিকে নিতান্তই হালকা ভাবে নিয়ে ছিলেন সুপারিনটেনডেন্ট।

এই রোগীর মৃত্যুর পর সকল স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সরা তাদের কোয়ারান্টাইনে রাখার জন্য দাবী করতে থাকেন। প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সদের দাবিকে উপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকমী ও নার্সদের দাবি জোরদার আকার ধারণ করলে মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নার্স ও স্বাস্থ্যকমীদের দাবি কার্যত মেনে নিয়ে মৃতার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ২৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর জন্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত সুপারিশ পাঠান। এবং হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট রোগীর সংস্পর্শে আসা আত্মীয়দেরও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত ৫তম রোগীর মৃত্যু হয় মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। হাওড়ার মল্লিক ফটক এলাকার বাসিন্দা ৫৮ বছর বয়সী ঐ ব্যক্তি হাওড়ার গোলাবাড়ি এল.আই.এস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। মঙ্গলবার রিপোর্ট আসার আগেই তিনি সন্ধ্যা নাগাদ মারা যান বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। যদিও রিপোর্ট আসার পরে জানা যায় তিনিও করোনা পজিটিভ ছিলেন।

 

Advertisements

Leave a Reply