ডাঃ ভবতোষ ভৌমিকের এক বিরল অস্ত্রপ্রচারে কিশোরী ভবিষ্যতে পাবে মাতৃত্বের সুখ
HnExpress সুদীপ ঘোষ, নদীয়া : ডাঃ বি. ভৌমিকের বিরল অস্ত্রোপচারে নতুন জীবন পেল নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের কিশোরী।
নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ এলাকায় এক চোদ্দ বছরের এক কিশোরীর শরীরে ছিল না ভ্যাজাইনা। ফলে যৌবনের লক্ষ্মণ ঋতুক্রিয়ার সময় আসতেই সমস্যা দেখা ওই কিশোরীর। ঋতুক্রিয়া শুরু হলেও তার নিষ্ক্রমণ হয় না। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে হত ওই কিশোরীকে। কেন ওই অসহ্য যন্ত্রণা, তা কেউ বুঝে উঠতে পারে নি। কেটে যায় প্রায় আড়াই বছর।
কিশোরীর বাবা মা নেই। বর্তমান অভিভাবক হিসাবে আছেন তার মামা। কিন্তু মামা আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত। শত আর্থিক অনটনের মধ্যেও ভাগ্নিকে নিয়ে কলকাতায় দেখিয়েছেন অনেক ডাক্তার। সাধ্যমত যতটা খরচ করার তাই করেন, তবুও ভাগ্নির কষ্ট দূর করতে পারেননি। অবশেষে তারা দ্বারস্থ হন ডাঃ ভবতোষ ভৌমিক এর কাছে।
কার্যত বিরল অপারেশন করে ওই কিশোরীকে শুধু নতুন জীবনই দিলেন না, তার নারী জীবনের শ্রেষ্ঠ স্বপ্নটি পূরণ করলেন। হয় তো সেই কিশোরী কোনো দিনও মা হতে পারতেন না। সারা জীবন তাকে এই যন্ত্রনা নিয়ে চোখের জল ঝরাতে হতো। সেই চোখের জল মুছিয়ে ওই কিশোরীর মাতৃত্বের ভবিষৎকে এনে দিলেন তার জীবনে।
হ্যাঁ, অসম্ভবকে সম্ভব ঘটিয়ে ওই কিশোরীর শরীরে ভ্যাজাইনা বসিয়ে আগামীদিনে দাম্পত্যজীবনে প্রবেশের পথ খুলে দিলেন। এবার যৌবনের বয়সে পা দিয়ে মা হতে পারবে ওই কিশোরী। অপারেশন করে প্রায় নজির সৃষ্টি করলেন ভবতোষ ভৌমিক নামে ওই ডাক্তার।
আর যেখানে করলেন এই অপারেশন, সেই কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে এই বিরল অপারেশন করাটা প্রায় কল্পনাতীতই বটে। ৪৫ বছর বয়সী অনেক রোগীর প্রিয় ওই ‘ডাক্তারবাবু’ বুধবার রাতে ছিলেন ভীষণ খুশিই। আর তা তো হবারই কথা। কারণ তাঁর জীবনের প্রথম বিরল এই অপারেশন করতে অনেক ঝুঁকি যে তাঁকে নিতেই হয়েছে। তাই তো বলেই ফেললেন, ‘অবশ্যই ভালো লাগছে, কারণ অপারেশন সফল। ওই কিশোরী সুস্থই রয়েছে।
এটা আমার জীবনের একটা অন্যতম বড় সাফল্য। ঠিক গর্ব নয়, ওই কিশোরীর মা হওয়ার সম্ভাবনাকে তৈরি করা গিয়েছে, তার জন্যই বেশি ভালো লাগছে। ‘কৃষ্ণগঞ্জের বানপুরের বাসিন্দা ওই কিশোরীর শরীরে জরায়ু ছিল ঠিকই, ছিলই না ভ্যাজাইনা। ফলে তার মা হওয়ার সম্ভাবনা কোনভাবেই ছিল না। যৌবনের স্বাদ পাওয়া তার জীবনে ছিল অসম্ভব। জন্মগত ত্রুটি (কনজেনিটাল অ্যাবনর্মালিটি )-র জন্য ভ্যাজাইনা ছিল না তার। অনেক ডাক্তারের দুয়ার ঘুরে ঘুরে মাস ছয়েক আগে ওই কিশোরী পৌঁছেছিল ডাক্তার ভবতোষ ভৌমিকের কাছে।
‘ডাক্তারবাবু ‘বুঝেছিলেন ওই কিশোরীর মূল সমস্যাটি ঠিক কী ? আড়াই মাস আগে সদর হাসপাতালেই ওই কিশোরীর প্রথম অপারেশন করেন। তার আগেই তৈরি হয়েছিল প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে ভ্যাজাইনা। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে অ্যাননিয়ন গ্র্যাফট। সেই ভ্যাজাইনা ওই কিশোরীর শরীরে বসানো হয়। এরপর ওই হাসপাতালে কিছুদিন ওই কিশোরীকে রেখে অবজারভেশন করা হয়।
এরপর রোগীদের প্রিয় ওই ‘ডাক্তারবাবু ‘ওই কিশোরীকে ছুটি আপাতত দিলেও প্রতিদিনই তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। দিতেন পরামর্শ , কীভাবে থাকতে হবে, কী ওষুধ খেতে হবে। এরপর রবিবার ওই কিশোরী ফের ভর্তি হয় ওই হাসপাতালে।
বুধবার আবারও অপারেশন করেন। ভ্যাজাইনার সঙ্গে জরায়ুর সংযোগ করিয়ে ক্যানেল করা হয় এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় পেটের। যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে, থ্রু অ্যাবডমিনাল রুট। এর ফলে ওই কিশোরী পূর্ণ যৌবন বয়সে হতে পারবে মা। পাবে যৌবনের ও বিশেষকরে মাতৃত্বের স্বাদ। বিরল ওই অপারেশন করতে খরচ হত অন্তত তিন-চার লক্ষ টাকা।
কিন্তু তা কী সম্ভব ছিল গরীব ওই কিশোরীর মামার পক্ষে? না, একদমই না। অথচ এমন অপারেশন হল সম্পূর্ণ বিনা খরচে। অবশ্য একটু হয়ত ভুল হল, খরচ হয়েছে। প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে ভ্যাজাইনা তৈরি ও অন্যান্য ব্যাক্তিগতভাবে যে খরচ করতে হত ওই কিশোরীর পরিবারকে, তা করলেন ওই ডাক্তারবাবু নিজেই। সরকারি হাসপাতাল, তাই অপারেশনের খরচের ব্যাপার নেই। সদর হাসপাতালে ওই ডাক্তারকে অ্যাসিষ্ট করলেন অজ্ঞানের ডাক্তার ডা .উল্লাস গায়েন ও তিনজন সিস্টার।
নদিয়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস কুমার রায় বলেন, “আমাদের জেলা হাসপাতালে এরকম একটি অপারেশন সত্যিই বিরল। আগে কখনো হয়েছে বলে আমার অন্ততঃ জানা নেই। তবে আমরা খুবই আনন্দিত এই ভেবে যে আমরা এক কিশোরীকে সম্পূর্ণ নারীতে পরিনত করতে পেরেছি। অন্যান্য মেয়েদের মতো সেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। এটা নদিয়া জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের একটা চুরান্তকারী বড় সাফল্য।”
সফল ওই অপারেশন করার পর সুস্থ রয়েছে ওই কিশোরী। তার পরিবারের লোকজন ওই ডাক্তারবাবুকে সাক্ষাত ভগবান ভাবছেন। ওনার নাম করতেই আনন্দাশ্রু ফেলে তাঁর উদ্দ্যেশ্যে কোন কথা না বলে শুধু কপালে ঠেকালেন হাতজোর করে।